অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রামে আসছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন, জোবরা গ্রামে নিজ জন্মভিটা পরিদর্শন, বন্দর পরিদর্শন ও সার্কিট হাউসে সাময়িক অবস্থানসহ দিনব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৪ মে সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ ইয়ার্ডে অনুষ্ঠিতব্য একটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন।
বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে বন্দরের চলমান কার্যক্রম, কর্মক্ষমতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ চলমান ও প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ে একটি মাল্টি–মিডিয়া উপস্থাপনা করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অনুষ্ঠান সেরে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আসবেন।
এরপর সার্কিট হাউস থেকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এ উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়টি হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামের পাশে অবস্থিত।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।পাশাপাশি অধ্যাপক ইউনূস জোবরা গ্রামের যেখান থেকে তিনি ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন সেই বাছাইয়ের দোকানস্থ তেভাগা খামার পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ জোবরা গ্রামেই তিনি তার প্রথম ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিলেন।
এ ছাড়া তিনি তার জন্মস্থান হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামও পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টার হাটহাজারী আগমন উপলক্ষে উপজেলার সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে সবকিছু, সংস্কার হচ্ছে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লেখন, আলোক সজ্জা, তোরণ নির্মাণসহ ব্যাপক সাজ সজ্জার কাজ।
জোবরা গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বি শামসু, কামাল উদ্দিন, শাহাব মিয়া, মোনাফ সওদাগরসহ অনেকেই জানান, ইউনূস আসবে বলে তাদেরসহ পুরো গ্রামবাসীর মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ কাজ করছে।
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার পৈত্রিক বাড়ি নিজ জন্মস্থান বাথুয়া গ্রাম নিবাসী ফখরুল, কাশেম, জামাল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘ইউনূস সাহেব আমার এলাকার মানুষ। তিনার কারণে আজ আমাদের গ্রাম এলাকা পৃথিবীর বুকে পরিচিত। তিনি উপদেষ্টা হবার পর এই প্রথম আমাদের এলাকায় আসবেন, এ যে কি রকম আনন্দের তা ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারবো না।’
কর্মসূচি সফল করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীণ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফল করার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
আমরা আশা করি, এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি দেশের যেকোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হবে।
কারণ এই জমকালো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রায় এক লাখ মানুষ চবি ক্যাম্পাসে সমবেত হবেন।’চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছোট ছোট পাহাড় ও টিলাজুড়ে বিস্তৃত ২ হাজার ৩০০ একর জমির ওপর নির্মিত ক্যাম্পাসকে আরও সুন্দর ও মনোরম করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার চট্টগ্রাম আসছেন। এটি দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রোড ডিভাইডারে রংকরণ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যুতায়নসহ আমাদের বিভিন্ন কাজ চলছে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে চট্টগ্রামের জনগণ তাদের মাটির সন্তানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রধান উপদেষ্টার নিজ জেলায় বহুল প্রতীক্ষিত সফরটি সফল করতে আমরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুসারে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’
যাযাদি/এল