শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নাঈম ইসলাম সংগ্রাম
  ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০১
আপডেট  : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৭
ছবি সংগৃহীত

আপনি বাসে বা ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছেন দেখবেন হঠাৎ করে একদল লোক এসে বলছে "এই দুষ্টু টাকা দে!" কারা এরা? নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কাদের কথা বলছি! এরা হচ্ছে হিজড়া জনগোষ্ঠী।

রাস্তাঘাটে হিজড়ার অপর নাম হয়েছে আতঙ্ক। তারা রাস্তাঘাটে, বাস-ট্রেনে, যেখানে সেখানে মানুষের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। হিজড়াদের উৎপাত এতদিন শহরে লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমানে গ্রামেও এদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামে কোনো বিয়ের কথা শুনলে সেখানে গিয়ে তারা জোরপূর্বক টাকা দাবি করে। তারা এমনও বলে তাদের নির্দিষ্ট রেট রয়েছে এই রেটের কম তারা নিবেনা। শুধু তাই নয়, নবজাতক ও শিশুদের জিম্মি করে অভিভাবকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

প্রতিটি হিজড়া দলের একজন করে গুরু মা থাকেন। এই গুরু মায়ের ছত্রছায়ায় তারা নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা, যৌন ব্যবসা, খুন সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে থাকে।ইদানীং দেখা যাচ্ছে, কিছু ‘নকল’ হিজড়া যারা মূলত পুরুষ; অথচ হিজড়া সেজে বাড়ি বাড়ি চাল ও টাকা আদায় করছে। তাদের কাজে কেউ বাধা দিলে তারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে প্রকাশ্যেই কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে। পুরুষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা হিজড়া হয়েছে; তারাই বেশি অত্যাচার করে থাকে।

আমি নিজেও এমন লজ্জাজনক ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছি,"২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বাসে করে আমি আর আমার বন্ধু আসছিলাম। হঠাৎ করেই রংপুর মডার্ণ মোড় থেকে তিনজন হিজড়া বাসে ওঠে এবং সকলের নিকট থেকে টাকা তুলতে থাকে। এক ছেলে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার সাথে বাক-বিতন্ডতা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে অহেতুকভাবে এক হিজড়া কাপড় খুলে ফেলে। পাশে বসা এক কৌতূহল কিশোরী মেয়ে উঁকি দিয়ে বিষয়টি দেখছিলো। এই ঘটনাটি কিন্তু নিঃসন্দেহে সামাজিক এবং নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটিয়েছে। কেউ চাইলেই তার স্বেচ্ছাচারিতায় একটি পারিপার্শ্বিকতায় এমন অবক্ষয় ঘটাতে পারেন না।

এই ইদ মৌসুমে হিজড়াদের চাঁদাবাজি বেশ রমরমা।তারা মানুষজনের নিকট অসহায় বলে সাহায্য প্রার্থনা করে টাকা নেয়। কেউ ব্যাক্তিগত সমস্যার কারণে টাকা নাই'ই দিতে পারে।কিন্তু হিজড়ারা তার সাথে অশোভনীয় আচরণ কোনোভাবেই করতে পারে না যা ব্যাক্তিদের নাগরিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।

হিজড়াদের কর্মক্ষেত্র কম,তাদের কাজ করার সুযোগ বাস্তবিক অর্থে কম।মানুষজন তাদের সামর্থ অনুযায়ী হিজড়াদের সাহায্য করতে চায়।কিন্তু হিজড়ারা এখন এমনভাবে টাকা দাবি করে যেনো বিষয়টি তারা সাংবিধানিকভাবে পেয়ে থাকে।এমনই এক ঘটনার স্বাক্ষ্য দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেহমান সোহান।তিনি বলেন,"বাড়িতে আসার উদ্দেশ্যে গতকাল কল্যানপুর থেকে বাসে ওঠার ১০ মিনিটের ভিতরে ৩ দফায় ৯ জন হিজড়া উঠেছিলো বাসে! তাদের সবাই ঈদ উপলক্ষে সালামী চায়, ১০/২০ টাকা নিতে চায় না। তাদেরকে নাকি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি। এই নৈরাজ্যের শেষ কোথায়?"

শুধু হিজড়ারা নয় বর্তমান সময়ে হাতি দিয়েও রাস্তাঘাটে রীতিমতো চাঁদাবাজি হচ্ছে। রাস্তা অবরুদ্ধ করে হাতি দিয়ে বাস, ট্রাক, ভ্যান, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল আরোহীদের থেকে জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হচ্ছে। হাতি দেখে ভয়েই মানুষজন ইচ্ছের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে দিচ্ছে। হাতি দিয়ে এভাবে টাকা নেওয়ার ফলে অনেকসময় রাস্তাঘাটে জানযট সৃষ্টি হচ্ছে, ঘটছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

এহেন পরিস্থিতিতে বোধহয় আইনসৃষ্টিকারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকরী ভূমিকা পালন করা উচিত। সেইসাথে জনগনের সচেতন হয়ে সোচ্চার প্রতিবাদ করাটাও সময়ের দাবি।

লেখক : হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে