বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধে দেশিয় মৌসুমী ফল

প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার সরকার
  ১৮ জুন ২০২৫, ১৪:১৫
পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধে দেশিয় মৌসুমী ফল
প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার সরকার। ফাইল ছবি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অবাধ লীলাভূমি এবং ষড়ঋতুর আবর্তে আবর্তিত বাংলাদেশ। আমাদের দেশে কখনো ফল, কখনো ফুল, কখনোবা শাক সবজি ইত্যাদি লেগেই আছে। এ ফলগুলোর কোনোটি মিষ্টি, কোনোটি টক, কোনোটি রসালো, আবার কোনোটি হতে পারে কস্তা, সবমিলে এক অপরূপ সমারোহ। তবে গ্রীষ্মকালেই সবচেয়ে বেশি ফল হয়ে থাকে। এ জন্য এ সময়কে মধুমাসও বলা হয়ে থাকে। মানবদেহে খাদ্য উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেল্স এর অন্যতম উৎস হলো ফলমূল।

মূলত ভিটামিন ও মিনারেল্স শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে এবং আমাদের শরীরকে খাদ্যের শর্করা, আমিষ ও চর্বির ব্যবহারে সাহায্য করে। অর্থাৎ ফলমূলসমূহ এর আমাদের শরীর রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন অন্ততঃ গড়ে ১০০ গ্রাম বিভিন্ন ফল খাওয়া উচিত। বছরের প্রায় সব সময় কম বেশি ফলমূল হয়ে থাকে।

এ সমস্ত মৌসুমী ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান/ভিটামিন ও মিনারেলস্ এর চাহিদা পূরণ সম্ভব। তাছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ের প্রক্রিয়াজাত ফলের তুলনায় আমাদের দেশে মৌসুমে ফলের স্বাদ ও পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়।

এখন আবহাওয়া বৈচিত্র্যময়, এই রোদ-এই বৃষ্টি। গরমে শরীর ঘেমে যায়, আবার ঠান্ডা বাতাস। এভাবে গরম আর ঠান্ডা মিলে নানা অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। এ সময় অনেকের ভাইরাস জ¦র, জন্ডিস, ডায়রিয়া হয়ে থাকে। অনেকে আবার এলার্জির সমস্যায় ভোগেন। বৃষ্টির পর অনেক সময় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করে এবং গরম লাগে। কারণ ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা ও ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। ফলে সহজেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রোগ হলে ওষুধ খেতে হবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। তবে রোগ প্রতিরোধে মৌসুমী ফলসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বেশি করে মৌসুমী ফল গ্রহণের মাধ্যমে রোগ বালাই কমানো যেতে পারে।

বাংলাদেশে এ মৌসুমে আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা, বাঙ্গি, জামরুল, পেঁপে, শসা, লেবু, পানিফল, কলা, তালের শাঁস, বেল ইত্যাদি ফল প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এবং মিনারেলস্ এর সহজ ও সস্তা উৎস হলো এসব ফল। ফল রান্না ছাড়াই সরাসরি খাওয়া যায় বলে এসবের উপাদান অবিকৃত অবস্থায় দেহ কর্তৃক গৃহিত হয়, যা আমাদের বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকার মিনারেলস্ যেমন-ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস এসব দেহের বিপাকীয় কার্যাবলী স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ফল অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, পানি এসব দেহে সরবরাহ করে দেহকে সুস্থ্য রাখে। তাই আমাদের বিভিন্ন মৌসুমী ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

আম : ফলের রাজা আম স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয় জনপ্রিয় ফল। শুধু স্বাদে নয় পুষ্টিগুণেও ভরপুর আম। পাকা আম ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম আম এ ১০০০-১৫০০ আইইউ ভিটামিন-এ থাকে। এছাড়া আমে ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম ও ক্যারোটিন থাকে। চোখের নানা রোগ, চুলপড়া, খসখসে চামড়া, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দূর করে থাকে আম। এ ফল টনিক, বলকারক, মুখরোচক, রক্তপড়াবন্ধকরণ ও যকৃতের জন্য উপকারী।

কাঁঠাল : কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের প্রতিটি অংশই খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৪৮ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৯.৯০ গ্রাম শর্করা, ১.৮০ গ্রাম আমিষ, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। কাঁচা কাঁঠালে আঁশের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কাঁচা কাঁঠাল বেশি উপকারী। রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নাই। অন্যদিকে পাকা কাঁঠালের ক্ষেত্রে প্রচলিত আছে ‘কাঁঠাল আর মুড়ি নেইকো তার জুড়ি’।

জাম : জাম বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের একটি পরিচিত ফল। টাটকা ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও এ ফল থেকে উপাদেয় রস, স্কোয়াসসহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম জামে ১১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৪০ গ্রাম শর্করা, ১.০ গ্রাম আমিষ, ০.৮০ গ্রাম চর্বি, ৩.৮০ গ্রাম আঁশ, ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪.৩০ মিলিগ্রাম লৌহ, ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১২০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন পাওয়া যায়। পাঁকা জামের রস সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে ৩-৪ ঘন্টা পর খেলে পাতলা পায়খানা, অরুচি ও বমিভাবের উপশম হয়। জামের বীজ থেকে তৈরি পাউডার খেলে বহুমূত্র রোগ নিরাময় হয়। জামের কচি পাতা পেটের অসুখে কাজ করে। আম ও জামের রসের মিশ্রন পান করলে বহুমূত্র রোগের উপশম হয়।

লিচু : লিচু বেশ পুষ্টিকর ও লোভনীয় ফল। ফলের রসালো অংশ তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে। কাঁশি, পেট ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধি রোধে লিচু অনেক উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৩.৬০ গ্রাম শর্করা, ১.১০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭০ মিলিগ্রাম লৌহ, ৩১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান।

আনারস : আনারস পুষ্টিকর সুস্বাদু ফল। এটি মুখরোচক ফল। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে ৩০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৬.২০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৮৩০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। কাঁচা আনারসের শাঁস ও রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমি দমন হয়। এছাড়াও কফ, কাশি উপশমসহ জীবাণুনাশক, হজমকারক, মূত্রবর্ধক ও চর্মরোগ নিবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তরমুজ : তরমুজ আমাদের দেশের অতি পরিচিত এবং সবার প্রিয় ফল। গরমে ক্লান্তি দূর করতে এই ফলের তুলনা হয় না। তরমুজ তৃষ্ণা মেটায়। রক্তস্বল্পতা দূর করে। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পদার্থ। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পানি। অতিরিক্ত ঘাম এবং তৃষ্ণা দূর করতে তরমুজের রস খুবই কার্যকর। কাজের কারণে ক্লান্তি যতই আসুক তরমুজের রস খেলে অল্প সময়েই ক্লান্তি দূর হয়। তরমুজের বীজ বেটে ঠান্ডা পানিতে চিনিসহ মিশিয়ে খেলে যকৃত পরিষ্কার থাকে।

পেয়ারা : কিছুদিন আগেও পেয়ারা শুধু নির্দিষ্ট মৌসুমে পাওয়া যেত। বর্তমানে বছরব্যাপী বাজারে পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশি ফল আপেলের বিকল্প হিসেবে সকলে পেয়ারা গ্রহণ করছে, এটা ভালো লক্ষণ। ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে ৫১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১১.২০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান।

বাঙি : রসালো ফল হিসেবে এ ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ হয় এই ফলটি। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙিতে ১৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৩.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৩০ গ্রাম আমিষ, ৩২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৪০ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৬৯ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান ।

জামরুল : রসালো ও হালকা মিষ্টি জামরুল গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। বর্তমানে সাদা, খয়েরি-লাল ও হালকা গোলাপী রংয়ের জামরুল দেখা যায়। এটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। বহুমূত্র রোগীর জন্য জামরুল অনেক উপকারী। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম জামরুলে ৩৯ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৭০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৪১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান ।

পেঁপে : পেঁপে বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফল। পেঁপে স্বল্পমেয়াদি, সুস্বাদু, পুষ্টি সমৃদ্ধ ঔষধি গুণাবলী সম্পন্ন। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৪২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮.৩ গ্রাম শর্করা, ১.৯ গ্রাম আমিষ, ৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। কাচা পেঁপেতে ‘পেঁপেইন ’ নামক হজমকারী দ্রব্য রয়েছে, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অজীর্ন,আলসার, একজিমা, কৃমির উপদ্রব, ত্বকের ক্ষত, যকৃতের জটিলতা, আন্ত্রিক ও পাকস্থলির ক্যান্সার, ডিপথেরিয়া নিরাময়ে পেঁপে বিশেষভাবে উপকারী। কাশির সাথে রক্ত পড়া, রক্ত অশ্ব, মূত্রনালীর ক্ষতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দমনে পেঁপের উপকারী ভূমিকা রয়েছে। কাঁচা পেঁপে ডায়রিয়া ও জন্ডিস সারায়। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা পেঁপে জুস করে খাওয়া যায়।

শসা : গরমে প্রশান্তি দেয় শসা। গরমে শরীরে যে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়, তা শসার মাধ্যমে অনেকটা পূরণ করা যায়। শসা ত্বকের জন্য ভালো। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম শসাতে ২২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৩.৩০ গ্রাম শর্করা, ১.৬০ গ্রাম আমিষ, ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন এবং ৯৪.৯০ গ্রাম জলীয় অংশ বিদ্যমান ।

লেবু : লেবু সকলেরই প্রিয়। সালাদ হিসেবে লেবুর ব্যবহার খুব বেশি। শরবত তৈরিতে লেবুর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে ৪৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১০ গ্রাম শর্করা, ০.৩ গ্রাম আমিষ, ০.৭ গ্রাম চর্বি, ১.৭ গ্রাম আঁশ, ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৩ মিলিগ্রাম লৌহ, ৪৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান। দাঁতের ব্যথা, মাড়ি ফোলা, রক্তপড়া নিরাময়ে লেবুর ছাল চূর্ণ করে মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়। জ¦র-অরুচিতে লেবুর রস বল বৃদ্ধিকারক।

পানিফল : পানিফল আর একটি পুষ্টিকর ফল। এ ফলে শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি বিদ্যমান। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ৬৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১১.৭০ গ্রাম শর্করা, ২.৫০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি এবং ৮৪.৯০ গ্রাম জলীয় অংশ বিদ্যমান ।

পাকা কলা : বাংলাদেশে একটি অতি পরিচিত ফল কলা। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে কলার জুড়ি নাই। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কলাতে ১০৯ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২৫.০০ গ্রাম শর্করা, ০.৭০ গ্রাম আমিষ, ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান।

তালের শাঁস : তাল গ্রামীণ জনপদের অতি পরিচিত ফল। যদিও তাল ভাদ্র মাসে পাকে। তবে কাঁচা/কচি তালের শাঁস বেশ জনপ্রিয়। এটি রসালো বলে দেহে শীতল আমেজ আনে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।

বেল : সারাবছরই কমবেশি পাওয়া গেলেও গরমকালে এই ফলের চাহিদা খুব বেশি দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় সারাতে খুব উপকারী। সর্দি, জ¦র, ক্ষুধাবৃদ্ধি সহ পাকস্থলী, মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ডের শক্তি বৃদ্ধিতে এ ফল বেশ উপকারী। এ ফলের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখ জ্বালা করা রোগের উপশম ঘটে। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে ৮৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৮.৮০ গ্রাম শর্করা, ২.৬০ গ্রাম আমিষ, ৩৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ০.৬ মিলিগ্রাম লৌহ বিদ্যমান।

কামরাঙা : কামরাঙা একটি সুস্বাদু ও উপকারী ফল। এটি টকমিষ্টি জাতীয় ফল। এটি টাটকা অবস্থায় ও প্রক্রিয়াজাত উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙায় ৫০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৯.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৫০ গ্রাম আমিষ, ১ গ্রাম চর্বি, ১ গ্রাম আঁশ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.২১ মিলিগ্রাম লৌহ বিদ্যমান। কামরাঙা রুচিবর্ধক, ক্ষত নিরাময়কারী, পেট ফাঁপা, বমিভাব বন্ধ করায় বেশ কার্যকরী। শরীরের দুর্বলতা রোধ এবং প্র¯্রাব পরিস্কারক হিসেবে এর ভূমিকা রয়েছে।

আমলকি : অন্যান্য ফলের তুলনায় আমলকিতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-সি বিদ্যমান। ওষুধি ফল হিসেবেই আমলকি পরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আমলকিতে ১৯ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৩.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ৩.৪০ গ্রাম আঁশ, ৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.২০ মিলিগ্রাম লৌহ বিদ্যমান। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, কাঁশি, হাঁপানি, বহুমূত্র, অজীর্ণ, জ্বর জ্বর ভাব, যকৃতের রোগ নিরাময়ে আমলকি বিশেষ উপকারী। এছাড়াও বদহজম ও চর্ম রোগের চিকিৎসায় আমলকি ব্যবহৃত হয়। আমলকির রস ও মধু মিশিয়ে খেলে শিশুদের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়। ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে আমলকি টাটকা ও ভিজিয়ে রস খাওয়া উচিত। চুলপড়া ও চুল পাকা রোধ, হৃৎপিন্ড ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক, পিপাসা নিবারক, জন্ডিস, রক্তস্বল্পতা রোধে আমলকির গুরুত্ব অপরিসীম।

আমড়া : টক ফলের মধ্যে আমড়া অন্যতম। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আমড়াতে ৬৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৫ গ্রাম শর্করা, ১.১০ গ্রাম আমিষ, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন- সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৮৩.২০ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে। আমড়া পিত্ত ও কফ নিবারক, আমনাশক ও কন্ঠস্বর পরিষ্কারক। এছাড়া রুচিবর্ধক হিসেবে আমড়া যথেষ্ট উপকারী।

আতা : আতা বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের অতি পরিচিত ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আতা ফলে ৯০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২০.৬০ গ্রাম শর্করা, ৩৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন- সি, ১.৫০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৭৬.৭০ গ্রাম জলীয় অংশ বিদ্যমান। আতা বলকারক, বাত ও পিত্তনাশক, বমননাশক, রক্ত ও মাংস বৃদ্ধিকারক।

তেঁতুল : ভেষজ গুণাবলীতে ভরপুর তেঁতুল। তেঁতুলের পুষ্টিমান ভালমানের। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী পাকা তেঁতুলে ২৮৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৬৬.৪০ গ্রাম শর্করা, ৩.১০ গ্রাম আমিষ, ১৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি রয়েছে। রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ও মেদভুঁড়ি কমাতে তেঁতুল বেশ উপকারী। তেঁতুলে বিদ্যমান টারটারিক এসিড খাদ্য হজমে সহায়ক। পেটের অম্লগ্যাস, পা জ্বালা উপশমে তেঁতুলের শরবত বেশ উপকারী। রাতে ঘুমানোর পূর্বে তেঁতুলের শরবত খেয়ে ঘুমালে ঘুম ভাল হয়। শারীরিক ও স্নায়ুবিক দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে তেঁতুলের শরবত বেশ কাজ করে।

আমাদের দেশিয় ফলগুলো পুষ্টি ও ভেষজ গুণের ভান্ডার। তাই আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা এবং নিজেদের সুস্থ্য রাখতে সহজপ্রাপ্য বিভিন্ন মৌসুমী ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। কথায় আছে ‘‘সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মন থাকুক সর্বক্ষণ”।

লেখক : ডিজিএম, নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।

বিএসসি. ইঞ্জি. (এগ্রি); এমএস ইন ফুড টেকনোলজি (বাকৃবি)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে