বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রফেসর ড. মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া
  ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২০
আপডেট  : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬
প্রফেসর ড. মোঃ আসাদুজ্জামান মিয়া

৮ জুলাই, ২০০০ খ্রি.। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবির)’র ২৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।

আজ থেকে দুই যুগ আগে এই দিনে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অ ল পটুয়াখালীতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষনার প্রসারে পবিপ্রবি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সরকার (১৯৯৬—২০০১) দক্ষিনবঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল ১৯৯৯ সালে। সে সময় দেশের ১২টি বৃহত্তর জেলায় ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার গ্রহণ করা হয় এবং প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয় যার মধ্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি ছিল একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন কাদের মোঃ ইউসুফ (প্রয়াত) কে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।

দেশের প্রত্যন্ত অ ল পটুয়াখালীর দুমকিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস আছে। সৃষ্টির শুরুতে এটি একটি বেসরকারি কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ নামে ১৯৭৯—৮০ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের অধিভুক্ত হয়ে যাত্রা শুরু করে। পটুয়াখালীর দুমকিতে কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন কেবিনেট সচিব (পরবতীর্ ধর্মমন্ত্রী) দুমকির কৃতী সন্তান এম কেরামত আলী। এর পরবর্তী প্রায় দুই দশক পর, ২০০০ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষনা করেন এবং ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষার ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনার পর এখানে ১৯৯৯—২০০০ সেশনে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। অতঃপর ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ বিলুপ্ত করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০০১ সালের অক্টোবরে জাতীয় নিবার্চনে সরকার পরিবর্তন হলে সাময়িক সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পরে দক্ষিনবঙ্গের ১ম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম। এক ধরনের অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হয় ১৯৯৯—২০০০ সেশনে ভর্তি হওয়া ১ম ব্যাচের ১২৫ জন শিক্ষার্থীদেও শিক্ষাজীবন। অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে অবশেষে আনন্দের সংবাদ আসলো। ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তব রূপ লাভ করল। পটুয়াখালী জেলার প্রশ্চাদপদ দুমকি উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন স্থানীয় অনেক গন্যমান্য মানুষের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ছিল। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দুমকি উপজেলার মানুষের অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার ফসল। তবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, বিশেষ করে সংসদে আইন পাস ও প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম সম্মানের সহিত খচিত থাকবে।

পবিপ্রবি এখন দক্ষিনবঙ্গের সব্বোর্চ বিদ্যাপীঠ। ১৯৭৯—৮০ সালে কৃষি কলেজ ও ২০০০ সালে কেবলমাত্র কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৮ টি অনুষদের অধীনে ৯টি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করছে। বর্তমানে পবিপ্রবির কলেবর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ছাত্রছাত্রী, ২৫০ জন শিক্ষক, ২০০ জন কর্মকর্তা ও ৫০০ জনের বেশী কর্মচারী রয়েছে। পবিপ্রবি দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানসম্মত গ্রাজুয়েট তৈরীতে ভুমিকা রাখছে। তাছাড়া মাস্টার্স ও পিএইচডি গবেষনায় পবিপ্রবির এগিয়ে যাচ্ছে। পবিপ্রবির অনেক শিক্ষক গবেষনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছেন। দেশের সেরা গবেষকদের তালিকায় পবিপ্রবির শিক্ষকরা স্থান পাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। পবিপ্রবিকে মানসম্মত ও প্রযুক্তি নির্ভর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা হিসেবে বিনির্মাণে আমাদের সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

বিগত দুই দশকে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার হলেও এখনো গুনগত মান নিশ্চিত করা যায়নি। তাই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধিও জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা ও গবেষনায় আধুনিক ও যুগোপোযোগী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান করতে হবে। শিক্ষা ও গবেষনায় অনেক দূর এগিয়ে নিতে যেতে হবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে