আগস্ট মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে শোকের মাস। আর সেই শোককে শক্তিতে রুপান্তর করতে সমাজের অর্ধ-শতাধিক অসহায় নারীকে স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন। সেলাই মেশিন প্রদান কর্মসূচি দুই পর্যায়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান পর্বগুলোতে উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ।
প্রথম পর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ শরীফ মাহমুদ অপু এর সহায়তায় এবং মাস্তুল ফাউন্ডেশনের “যাকাত স্বাবলম্বী প্রকল্প’ এর আওতায় বিধবা নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ২১ জন বিধবা, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন। গত ১১ আগস্ট কুমিল্লা জেলার বুড়ি চং উপজেলা পূর্ণমতি এমএ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে অসহায় এই নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এর সদস্য ও বুড়িচং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন তার বক্তব্যে বলেন, মাস্তুল ফাউন্ডেশনের যাকাত স্বাবলম্বী প্রকল্পের অর্থায়নে বিধবা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। উদ্যোগটি সমাজের দারিদ্র্য বিমোচনে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও ভুমিকা রাখবে। আমরা সবসময় মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে সহযোগিতে করে তাদের ভাল কাজে পাশে থাকতে চাই।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১৫ আগস্ট বিকেল ৪ টায় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে অসহায় নারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে মাস্তুল ফাউন্ডেশনের সহযোগী পার্টনার হয়ে কাজ করেছেন তাকওয়া মসজিদের খতিব জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম ও তাকওয়া সোসাইটি।
তাকওয়া মসজিদের খতিব মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, শরীয়াহ মোতাবেক যাকাত বন্টনের নিয়ম হলো- যাকাত গ্রহনে উপযুক্ত ব্যক্তির জীবনমান উন্নয়নে যেই বস্তু কিংবা উপকরন প্রয়োজন তাকে সেই জিনিসটা দেওয়া। আজ মাস্তুল ফাউন্ডেশন তাকওয়া সোসাইটির মাধ্যমে শরীয়াহ মোতাবেক যাচাই বাছাই করে ১৫ জন নারীর হাতে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী সেলাই মেশিন প্রদান করেছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়। যারা যাকাত ও সাদাকা দিতে আগ্রহী তাদেরকে মাস্তুল ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
কুমিল্লা জেলার বুড়ি চং উপজেলা পূর্ণমতি এমএ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সুবিধাভোগী নাসিমা বেগম বলেন- আমার স্বামী নেই। একটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলে আছে। তাকে নিয়ে আমার মানুষের বাসায় কাজ করতে হয়। এখন মাস্তুল ফাউন্ডেশন থেকে আমাকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। আমি ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতে পারব এবং পাশাপাশি ছেলের দেখাশোনাও করতে পারব। ধন্যবাদ মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে আমাকে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য। মাস্তুল ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান বলেন - শোকের মাসকে শক্তিতে রুপান্তর করার জন্য আমরা মাস্তুল ফাউন্ডেশন সমাজের অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছি। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সমাজের গরীব ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। দেশের সাধারন মানুষ মাস্তুলকে বিশ্বাস করে এবং তাঁদের যাকাতের অর্থ আমাদের নিকট তুলে দেয়। আমরা ইসলামের বিধি মোতাবেক সেই অর্থ দিয়ে যাকাত গ্রহনের উপযুক্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করার চেষ্টা করি। সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে যাকাত গ্রহনে উপযুক্ত সুবিধাভোগী নির্বাচন করে “যাকাত স্বাবলম্বী প্রকল্প” এর আওতায় তাদের স্বাবলম্বী করা হয়। আমি ধন্যবাদ জানাই সবাইকে যারা আমাদের এই মানবিক কাজে পাশে আছেন।
উল্লেখ্য, মাস্তুল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান। মাস্তুলের রয়েছে নিজস্ব স্কুল, মাদ্রাসা এবং শেল্টারহোম যেখানে আবাসিক/অনাবাসিক মিলে শতাধিক পিতামাতাহীন/ অনাথ/ এয়াতিম শিক্ষার্থী রয়েছে । এর বাহিরে কয়েক জেলায় প্রজেক্ট স্কুলগুলোতে হাজারের অধিক সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সকল শিক্ষার উপকরন দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবার, শিশু অধিকার, মৌলিক চাহিদা নিশ্চয়তা করা হচ্ছে। মাস্তুল ফাউন্ডেশনের রয়েছে সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে তোলা হচ্ছে। এর বাহিরে যাকাত স্বাবলম্বী প্রজেক্টের মাধ্যমে ৮০০ জনকে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে দাফন-কাফন সেবা প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০০ এর অধিক লাশ দাফন হয়েছে। রয়েছে মাস্তুল মেহমানখানা, যেখান থেকে শতাধিক অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের একবেলা পেট পুড়ে খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়।
যাযাদি/ এসএম