বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এর চেয়ারম্যান মো: সোহরাব হোসাইন সহ সব সদস্য গতকাল পদত্যাগ করেছে। পদত্যাগকৃত সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আওয়ামী সরকারের সময়কালে ২০১৮ এর জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
সাবেক সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদের জন্ম ২৩ মে ১৯৬৩ সালে কক্সবাজার জেলা ঈদগা উপজেলায়। তিনি ১৯৮৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন।
তিনি সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, মেয়রের একান্ত সচিব, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবেও দায়িত্ব ও পালন করেন। আওয়ামীলীগ সরকারের আজ্ঞাবহ এই কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের সচিব থাকাকালে রাতের ইলেকশানের আয়োজন করে আওয়ামী সরকারকে মসনদে আসীন করার অন্যতম ভূমিকা পালন করেন ।
তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন সময় সচিব হিসেবে কোর্স কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য অনিয়মভাবে পারিশ্রমিক নিয়েছিলে ৪.৭ মিলিয়ন টাকা যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। এছাড়া তিনি তৎকালীন উপজেলা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বক্তৃতা বা দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছিলেন।
যদি ও নির্বাচন কমিশনের একজন সচিব হিসেবে ঐ প্রশিক্ষণে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেওয়া তার রুটিন দায়িত্ব কিন্তু তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক সুশীল সমাজের কাছে বা জাতির কাছে বোধগম্য হয়নি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিল, হাজার কোটি টাকার ইভিএম ক্রয় ও মেরামতের নামে লুটপাট করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকাকালীন অবৈধভাবে অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেআইনী পন্থায় বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করার আদেশ দেন তিনি।
নিজ এলাকায় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অভিপ্রায়ে কক্সবাজার জেলার এক শ্রেণীর দূর্নীতিবাজ ও কতিপয় পেশিশক্তিদারিদের পোষণ করতেন তিনি। কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, দোহাজারী হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নিমার্ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সহ কক্সবাজার জেলার উন্নয়নের নামে নানা প্রকল্প গ্রহণ করে তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট লোকজন ও সিন্ডিকেট মিলে হাতিয়ে নেয় হাজার কোটি টাকা। এ ঘটনা উদঘাটন করার কারণে চাকুরিচ্যুত হন দুদকের কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম।
এছাড়া তিনি অবসর গ্রহণের মাত্র এক দিন আগে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যবহার করে ইউরোপে দশ দিনের স্টাডি ট্যুরে গিয়েছিলেন। যাহা বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের কাছে এটি অস্বাভাবিক বিষয় এবং এটি ছিল সম্পূর্ণ অনৈতিক ও সরকারি তহবিলের অপব্যয়।
সরকারি চাকুরি হতে অবসর গ্রহণের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য নামামুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় নানা কৌশলে ১১ মে ২০২৩ তারিখ ভাগিয়ে নেন পিএসসি’র সদস্যের পদ।
পিএসসির এই সদস্যকে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা এ সদস্য গ্রেফতার এড়ানোর জন্য যেকোনো সময় দেশত্যাগ করতে পারে।
যাযাদি/ এম