বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দল তৃণমূল বিএনপির প্রথম সম্মেলন আজ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
এ সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপিতে আসছে নতুন নেতৃত্ব। প্রতিষ্ঠাতার জীবদ্দশায়ই এই দল নিয়ে তেমন আলোচনা ছিল না। অথচ তার অবর্তমানে এই দলের নিবন্ধন এবং বিএনপির এক সময়ের হেভিওয়েট নেতাদের সেখানে যোগদানের খবর তৃণমূল বিএনপিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। প্রকাশ্যে বিএনপি নেতারা একে ‘খড়কুটো’ বলে অবিহিত করলেও ভেতরে দুশ্চিন্তাও আছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সম্মেলন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল বিএনপি। ব্যাপক শোডাউন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্মেলন শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখে দলটিতে চলছে নানা সমীকরণ।
জানা গেছে, বিএনপির সাবেক, বহিষ্কৃত ও নিষ্ক্রিয় একঝাঁক নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবেন তৃণমূল বিএনপিতে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য (বহিষ্কৃত) অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। শীর্ষ দুই পদে এ দুই নেতা থাকছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়াও পর্যায়ক্রমে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং নিজ থেকে ছেড়ে দেওয়া নেতারাও যোগ দেবেন। এ তালিকায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও রয়েছেন।
তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শমসের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার তাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তারা ভালো পদে থাকতে পারেন।
তৃণমূল বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সম্মেলনের আগের দিন অর্থাৎ সোমবারও অনেক বিএনপির নেতার সঙ্গে তৃণমূল নেতার কথা হয়েছে। পরিচিত-অপরিচিত মিলে প্রায় ৪০ জন আছেন এই তালিকায়। আগে থেকে কথাবার্তা হলেও বর্তমানে বিএনপিতে আছেন এমন কয়েকজন পরিচিত নেতার গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে নানা আশ্বাস ও দর কষাকাষি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বনিবনা চূড়ান্ত হলে আজ সম্মেলনে চমক থাকতে পারে। বিএনপির বাইরে চলে যাওয়া শমসের মুবিন, তৈমুর আলম ও উকিল আবদুস সাত্তারের মতো নেতাদের নাম সামনে আসলেও সোমবার দিনভর রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষা ছিল সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনকে নিয়েও। আলোচনা ছিল, মিলনকে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক থেকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে এক প্রবাসীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়। মিলনের মতো ত্যাগী নেতার দলে যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি সে জন্য অভিমানে দল ছাড়ছেন।
ডক্টর মিলনকে টেলিফোনে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কানাঘুষা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলাম। শহীদ জিয়ার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ২ বার নির্বাচিত ভিপি হয়েছিলাম আর বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সফল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। রাজনীতিতে যা পেয়েছি বেগম জিয়া ও জনগণের কাছ থেকে পেয়েছি এবং আমার সমকক্ষীয় কেউ তা পায়নি। এই গুজবের জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব বিএনপির কাঁধেই বর্তায়।’
সোমবার তৃণমূল বিএনপির সম্মেলন ঘিরে বিএনপি ভাঙনের আলোচনা ছিল রাজনৈতিক মহলে। বিএনপি নেতারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটা বিশাল প্রবহমান নদীর মতো ‘কেউ চলে গেলে তাতে দলের কিছু আসবে যাবে না’। তিনি বলেন, ‘তৈমুর আলম খন্দকার এখন আমাদের দলের সদস্য নন, শমসেন মবিন চৌধুরী আমাদের দলের সদস্য নন। সুতরাং তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। আমরা শুধু এইটুকু বলতে চাই, বিএনপি হচ্ছে একটা বিশাল প্রবহমান নদীর মতো। সেখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো যায় তাতে বিএনপির কিছু যায় আসে না। দ্যাট ইজ বিএনপি।’
একই বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপি তো বাকশাল নয়। বিএনপি সবাইকে স্বাধীনতা দেয়, যার যার ইচ্ছামতো রাজনীতি করবে। যারা বিএনপি করতে চায় করবে, যারা নতুন দল করতে চায় করবে। আমরা বাকশাল নই যে, সারা দেশের ১৮ কোটি মানুষকে আমরা জোর করে বলব যে, তোমরা একটাই দল করবে, তোমরা শুধু বিএনপি করবে সেই রাজনীতি বিএনপি করে না।’তৃণমূল বিএনপিতে আপনাদের দলের অনেকে যোগ দিতে পারেন এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দল থেকে পদত্যাগ করে তো একজন যোগ দিয়েছেন সংসদে। তাতে রাজনীতিতে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে, কোনো মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, সরকারের কি বিরাট বিজয় হয়েছে।’ তৃণমূল বিএনপির ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে বিএনপির মধ্য সারির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, সবকিছু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাবশালীদের সমর্থন যদি ক্ষমতাসীনরা আদায় করতে পারে সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপির ভবিষ্যৎ ভালো। আর যদি তা বিএনপির পক্ষে থাকে সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপির কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
এই নেতা আরও বলেন, তাদের কাছে তথ্য আছে, বিএনপির এক সময়ের নেতা নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত দল তৃণমূল বিএনপির নিয়ন্ত্রণ আসলে ক্ষমতাসীনদের হাতে। নাজমুল হুদা না থাকলেও এই দম্পত্তির মামলা এবং ব্যাংক ঋণসহ নানা জটিলতার প্রভাব আছে এই পরিবারে। সঙ্গত কারণে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তারা অনেক কিছু করতে বাধ্য হচ্ছে। এজন্য বিএনপিতে কোনো ভাবনা নেই তা বলা যাবে না। কারণ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সবদিকের নিয়ন্ত্রণ যদি ক্ষমতাসীনরা নিতে পারে সেক্ষেত্রে বিএনপির একধরনের ভাঙন হতে পারে এই দলকে দিয়ে। আপাতত প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে চলে যাওয়া ও বহিষ্কৃতদের। পর্যায়ক্রমে অভিমানি, মনোয়নবঞ্চিত, পদবঞ্চিতদেরও দেখা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। এর তিন দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি মারা যান তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন নাজমুল হুদার বড় মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’।
যাযাদি/ এস