রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নেত্রকোনা-২, (সদর-বারহাট্রা) আসনে দৃষ্টি সবার

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা
  ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৮:৫৮
নেত্রকোনা-২, (সদর-বারহাট্রা) আসনে দৃষ্টি সবার
ছবি: যায়যায়দিন

নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্রা আসনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষনা না হলেও এলাকায় বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। জেলার ৫টি আসনের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জেলা সদর কেন্দ্রিক এ আসনে আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে সরব আলোচনা হচ্ছে। সকল রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী জেলা সদর থেকে পরিচালিত হওয়ায় এ আসনটি সকলের কাছেই খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য একক প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে এগিয়ে থাকলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন এনিয়ে চলছে দলের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিযোগিতা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় ৬-৭ জন মনোনয়ন প্রত্যার্শী প্রার্থী সদর ও বারহাট্রা উপজেলায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আলোচনায় রয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী প্রার্থীরা হলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আরিফা জেসমিন নাহীন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান নুরু, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা. দেলোয়ার হোসেন টিটো।

এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী সাবেক জেলা আমীর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাওলানা এনামূল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক প্রীতম সোহাগ একক প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচনায় রয়েছেন।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. আশরাফ উদ্দিন খান স্বাধীনতার পূর্বে নেত্রকোনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে সবোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হন। পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সের সদস্য হিসেবে এফএফ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি নেত্রকোনা মহকুমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পরবর্তীতে ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পরে ১৯৮১ সালে নেত্রকোনার প্রথম জেলা পরিষদে উপ-মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সফলভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন । বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. আশরাফ উদ্দিন খান ১৯৯৭ সালে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি, ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে ১৫২৫ ভোটের মধ্যে ১১৬৮ ভোট পেয়ে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৬ সালের বাতিল হওয়া জাতীয় সংসদ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে মো. আশরাফ উদ্দিন খান প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। জেলা বিএনপির দুঃসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিকের ভুমিকা রেখেছেন তিনি। এজন্য তাকে নেত্রকোনার রাজপথে মাথার রক্ত ঝড়াতে হয়েছে।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দেড়দশকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খানের চকপাড়াস্থ বাসভবন গভীররাতে সবচাইতে বেশী পুলিশী তল্লাশীর শিকারে পরিনত হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর জেলা শহরের প্রতিটি পূজামন্ডপসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে রাতজেগে পাহাড়া দেয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান এ আসনের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিমধ্যে বিশাল ভোট ব্যাংকের স্বাক্ষর রেখেছেন। নেত্রকোনা সদর এবং বারহাট্রা উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. আশরাফ উদ্দিন খানের পারিবারিকভাবে সুনাম এবং পরিছন্ন ইমেজ রয়েছে।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. আনোয়ারুল হকের বিরুদ্ধে ১২টি মামলাসহ শহরের আধুনিক সদর হাসপাতাল রোডস্থ বাসভবনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্রা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়মিত গনসংযোগ করছেন। জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হকের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি এলাকায় জনপ্রিয়তার কারনে আওয়ামীলীগের রোষানলে পড়ে ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছেন। কেন্দ্রীয় এই নেতার ওপর একাধিকবার হামলাসহ অসংখ্য মামলায় জড়িয়ে তাকে হয়রানি করা হয়। তিনি জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি নেত্রকোনা-বারহাট্রার স্থানীয রাজনীতিতেও বেশ সরব রয়েছেন। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভা সমাবেশে তিনি নিয়মিত উপস্থিত হয়ে নেতা কর্মীদের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে দিকনিদেৃশনা প্রদান করে যাচ্ছেন।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আরিফা জেসমিন নাহীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামনের সাড়িতে নেতৃত্ব দেয়ায় রাজধানীসহ শহরের রাজপথ থেকে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে করাবরণ করেছেন। শহরের মোক্তারপাড়াস্থ বাসভবন সরকার দলীয় মিছিলের প্রতিদিন ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলার শিকারে পরিনত হওয়াসহ তিনি অসংখ্য মামলার আসামী। তিনি এ আসনে বিএনপির একক নারী প্রার্থী।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান নুরু দলীয় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্যতম। আওয়ামী বিরোধী সোচ্চার অবস্থানের কারনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান নুরুকে গত দেড়দশক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তৃনমুলের নেতা কর্মীদের মাঝে অ্রাডভোকেট নুরুজ্জামান নুরুর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যার্শী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন টিটো । তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকার অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি এলাকার অসহায়দের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।

এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে সাবেক জেলা আমীর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাওলানা এনামূল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একক প্রার্থী হিসেবে দলের সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক প্রীতম সোহাগ একক প্রার্থী হিসেবে নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্রা উপজেলায় বেশ আলোচনায় রয়েছেন।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে