কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যৌথভাবে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটির সাম্প্রতিক অভিবাসননীতি ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ঘিরে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আসর হতে যাচ্ছে। ১৬টি শহরে ১০৪টি ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনায় রয়েছে আয়োজকরা।
যেখানে কোটি কোটি দর্শক, খেলোয়াড়, মিডিয়াকর্মী ও কর্মকর্তা এই ইভেন্টে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক মার্কিন অভিবাসননীতির পরিবর্তন, যেমন নির্দিষ্ট দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ভিসা বিধি-নিষেধ, এই বৈশ্বিক আয়োজনকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের নীতিমালায় যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, তা অনেক দেশের সমর্থক, গণমাধ্যমকর্মী ও পরিবার-পরিজনের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এতে বিশ্বকাপের বহুজাতিক ও বর্ণিল পরিবেশে ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়া অভিবাসী, এলজিবিটিআই সম্প্রদায় বা অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে গৃহীত কিছু নীতি বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে এমন পরিবেশ তৈরি হতে পারে, যা অতিথিদের জন্য অস্বস্তিকর ও অমার্জনীয়।
আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর সম্ভাব্য বিধি-নিষেধ। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নেওয়া দর্শকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
তবে একটি স্বস্তির বিষয় হলো—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাবে। এতে করে খেলোয়াড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্টাফদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও দর্শক, মিডিয়া এবং পরিবার সদস্যরা এই ছাড়ের আওতাভুক্ত নন। ফলে টুর্নামেন্টের পূর্ণ অভিজ্ঞতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
এই সংকট মোকাবেলায় তিনটি মূল পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ফিফা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা :
১. স্বচ্ছ নীতিমালা ও সময়সীমা ঘোষণা : বিশ্বকাপের আগেই অভিবাসননীতি সংস্কারে স্পষ্ট পরিকল্পনা ও সময়সূচি প্রকাশ করতে হবে।
২. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত : এলজিবিটিআই, সাংবাদিক ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।
৩. অভিযোগ নিষ্পত্তির স্বাধীন ব্যবস্থা : যেকোনো বৈষম্য বা হয়রানির অভিযোগ দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে নিষ্পত্তির জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্বকাপ আয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ঐতিহাসিক সুযোগ। বিখ্যাত ভেন্যু লস অ্যাঞ্জেলেসের সোফি স্টেডিয়াম ও নিউ ইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু সফল ম্যাচ আয়োজন নয়, বরং বিশ্বকে দেখানো—কিভাবে বৈচিত্র্য ও সহাবস্থানের মাধ্যমে বড় আয়োজন বাস্তবায়ন করা যায়।
বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরা এখন তাকিয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ২০২৬ বিশ্বকাপকে মাঠের ভেতর ও বাইরে সফল করে তোলে।