শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্য পদ খারিজ

ম আগামী ছয় বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না তিনি ম দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। প্রতিটি মূল্য চোকাতে প্রস্তুত : রাহুল
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যপদ খারিজ হওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নিয়ে দলটির সংসদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কংগ্রেস সভাপতি মলিস্নকার্জুন খাড়্‌গে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীও -আউটলুক ইনডিয়া

ভারতের কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধীকে দেশটির সংসদ সদস্য (লোকসভা) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল উৎপল কুমার সিং এক গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে এই ঘোষণা করেছেন। গেজেট নোটিফিকেশনে লেখা হয়েছে, 'সুরাটের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ওয়েনাড়ের আসন থেকে লোকসভায় প্রতিনিধিত্বকারী রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্য (এমপি) পদ খারিজ হয়ে গেল।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, এবিপি নিউজ, এনডিটিভি

ওই গেজেট নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, যেদিন থেকে রাহুল গান্ধী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, সেদিন থেকেই ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)(ই) এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের আট নম্বর ধারা অনুযায়ী তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ হলো। উলেস্নখ্য, গত বৃহস্পতিবার গুজরাটের সুরাট জেলা আদালত রাহুল গান্ধীকে একটি ফৌজদারি মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদন্ড দেয়। তবে ওই রায়ের পর আপিলের জন্য ৩০ দিনের সময় দিয়েছে আদালত।

ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, দুই বছর কারাদন্ড হলেই সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায় আপনা থেকেই। যদি পরে আপিল করে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণও করতে পারেন, কিন্তু সংসদ সদস্য পদ আর ফিরে পাবেন না, এমনটাই মত আইনজ্ঞদের।

রাহুল গান্ধী ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করার সময় বলেছিলেন নিরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদিসহ মোদি পদবিধারীদের সবাই কী করে 'চোর' হয়! নিরব মোদি হচ্ছেন ভারতের পলাতক হীরা ব্যবসায়ী। আর ললিত মোদি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সাবেক প্রধান, যার ওপর আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।

রাহুলের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল পুর্নেশ মোদি নামে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক আইনপ্রণেতার অভিযোগের ভিত্তিতে। যিনি বলেছিলেন, রাহুল গান্ধীর মন্তব্য পুরো মোদি সম্প্রদায়ের জন্য মানহানিকর।

এদিকে, রাহুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজ হওয়ার পর শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে অন্য বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের পথে নেমেছে কংগ্রেস। শুক্রবার দলের সভাপতি মলিস্নকার্জুন খাড়্‌গে ১২টি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাম, জেডি (ইউ), ডিএমকের পাশাপাশি বৈঠকে ছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিও (আপ)। এরপর পার্লামেন্ট ভবন থেকে মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান তারা। ওই আইন বলছে, সংসদ সদস্য পদ খারিজ হওয়া রাহুল অন্তত আগামী ছয় বছর কোনো ভোটে লড়তে পারবেন না।

সুরাট জেলা আদালত রাহুলকে ১০ হাজার রুপির জামিনে মুক্তি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি তিনি। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এ ক্ষেত্রে ওয়েনাড়ের কংগ্রেস এমপির পদ রক্ষার পথে অন্তরায় হয়েছে, ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়। ঘটনাচক্রে, এক দশক আগে ওই রায় কার্যকর করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন রাহুল নিজেই।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দুই বছর বা তার বেশি কারাদন্ড হলে তৎক্ষণাৎ সংসদ সদস্য বা বিধায়ক পদ চলে যাবে। আইন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই হিসেবে রাহুলের সংসদ সদস্য পদ অবিলম্বে খারিজ হওয়ারই ছিল। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে আগে বলা ছিল, সাংসদ-বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাতে স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য তিন মাস সময় পাবেন। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার বনাম লিলি টমাস মামলায় আইনের সেই ধারাটি নাকচ করে রায় দিয়েছিল, দুই বছরের কারাদন্ডের সাজার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে।

পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালু প্রসাদের সংসদ সদস্য পদ বাঁচাতে মনমোহন সিংয়ের সরকার অধ্যাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্টে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বহাল রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাহুল সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে বাতিল কাগজের ঝুলিতে ফেলে দেওয়ার কথা বলার পর পিছু হটেছিল তৎকালীন ইউপিএ সরকার। এবার সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩ সালের সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই সংসদ সদস্য পদ খারিজ হলো ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদের।

এদিকে, সংসদ সদস্য পদ খারিজের পর অবশেষে নীরবতা ভেঙেছেন রাহুল গান্ধী। শুক্রবার বিকালে টুইট করে তিনি লিখেছেন, 'দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। প্রতিটি মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।'

রাহুল তার মন্তব্যে আক্রমণাত্মক না হলেও গর্জে উঠেছেন রাহুলের বোন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে তিনি প্রশ্ন তুললেন, প্রধানমন্ত্রীজির 'চামচারা' এক শহীদ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে দেশদ্রোহী, মীর জাফর বলছে। অথচ মোদি সংসদে কাশ্মিরী পন্ডিতদের অপমান করেছেন। কিন্তু তাকে আদালত কোনো সাজা দেয়নি, তার সংসদ সদস্য পদ খারিজও হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে