মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে সিনেমা আর হচ্ছে না ভারতে

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মে ২০২৫, ১৭:১২
‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে সিনেমা আর হচ্ছে না ভারতে
ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের সিনেমায় সব সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে বিজয়ী দেখানে হয়। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এটিকে এখন আর সত্যকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দেবার সুযোগ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন মন্তব্য করেন, ‘এত নীচেও নামা সম্ভব? যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে দেশের জন্য রক্ত-ঘাম ঝরাচ্ছেন, তাদের প্রতি অসম্মানজনক এই উদ্যোগ একেবারেই অনুচিত।’

সম্প্রতি পাকিস্তানে ভারতের সামরিক হামলা ঘিরে 'অপারেশন সিন্দুর' নামে একটি চলচ্চিত্রের ঘোষণা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তীব্র সমালোচনার মুখে ক্ষমা চেয়েছেন পরিচালক উত্তম মহেশ্বরী।

শুক্রবার (৯ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচালক উত্তম মহেশ্বরী ছবির ঘোষণা দেন। ছবিটি প্রযোজনা করবে নিকি ভিকি ভাঘনানি ফিল্মস এবং দ্য কনটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার।

ঘোষণার সময় একটি পোস্টারও প্রকাশ করা হয়, যেখানে যুদ্ধের পোশাক পরিহিত এক নারী সেনাকে অস্ত্র হাতে 'সিন্দুর' পরে নিতে দেখা যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে বিস্ফোরণ, কাঁটাতারের বেড়া, সামরিক ট্যাংক এবং যুদ্ধবিমান দেখা যায়।

দুই সপ্তাহ আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর বুধবার ভোরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে 'অপারেশন সিন্দুর' চালায় ভারত। এরপরই এই অভিযান অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে সিনেমা ঘোষণার সময় ও বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এর বিরোধিতা করে লেখেন, 'লজ্জা হওয়া উচিত, যুদ্ধ চলছে।'

এক ব্যবহারকারী লেখেন, 'সিন্দুর' বা 'অপারেশন সিন্দুর' নাম ব্যবহার করে সিনেমা বানানো যেতে পারে, তবে তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অনৈতিক।

আইনি দিক থেকে তা অনুমোদিত হলেও, নৈতিকভাবে এটা ভুল। কিছু জিনিস পণ্য নয়, সম্মানের দাবি রাখে।

আরেকজন লেখেন, 'নিজেদের ও দেশের মানসম্মান নষ্ট করা বন্ধ করুন।'

আরেকজন মন্তব্য করেন, 'এত নীচেও নামা সম্ভব? যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে দেশের জন্য রক্ত-ঘাম ঝরাচ্ছেন, তাদের প্রতি অসম্মানজনক এই উদ্যোগ একেবারেই অনুচিত।'

বিতর্ক বাড়তে থাকলে পরিচালক উত্তম মহেশ্বরী তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ক্ষমা চেয়ে লেখেন, 'সম্প্রতি আমাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অবলম্বনে 'অপারেশন সিন্দুর' নামের একটি সিনেমা ঘোষণা দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। কাউকে আঘাত করা বা কষ্ট দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।'

তিনি আরও লেখেন, 'একজন নির্মাতা হিসেবে সেনা সদস্যদের সাহস, আত্মত্যাগ ও শক্তি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এ ছবি কোনও লাভের জন্য নয়, বরং দেশপ্রেম থেকেই এমন একটি গল্প তুলে ধরার প্রয়াস।'

সমালোচনার প্রেক্ষিতে মহেশ্বরী বলেন, এই সিনেমার ঘোষণার সময় কারও কাছে তা অস্বস্তিকর বা কষ্টদায়ক হতে পারে, সেজন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। এটি শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং আমাদের জাতীয় আবেগ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের একটি সামাজিক চিত্র।'

শেষে তিনি লেখেন, 'শহিদদের পরিবার ও সীমান্তে লড়াইরত সাহসী সেনাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও প্রার্থনা সবসময় থাকবে। জয় হিন্দ! জয় ভারত!'

এদিকে সামরিক অভিযানের পর বলিউডে 'অপারেশন সিন্দুর' নামসহ একাধিক শিরোনামে সিনেমা নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। ইতোমধ্যে 'অপারেশন সিন্দুর', 'মিশন সিন্দুর', 'সিন্দুর: দ্য রিভেঞ্জ'সহ ৩০টিরও বেশি নাম নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসার্স কাউন্সিল এবং ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া ফিল্ম প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে