টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় বিআরটি ফ্লাইওভারে দিনেদুপুরে ঘটে যাওয়া এক ছিনতাইয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, চাপাতি হাতে তিনজনের একটি ছিনতাইকারী দল একজন পথচারীকে আক্রমণ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এমন সাহসী দিনে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুধুমাত্র স্থানীয় জনসাধারণকেই নয়, গোটা প্রশাসনকেও নাড়িয়ে দিয়েছে।
এই ফ্লাইওভার দীর্ঘদিন ধরেই ছিনতাইকারীদের জন্য যেন এক নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নির্জন সময় বা যাত্রী কম থাকার সময়টাতে চক্রটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। লোকাল ও আন্তঃজেলা বাসস্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত ফ্লাইওভারের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ওঠানামা করলেও নিরাপত্তার তেমন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই। ফলে সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওতে ছিনতাইকারীদের হাতে চাপাতি দেখা যাওয়ায় বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক রূপ ধারণ করেছে। এমন ঘটনায় হতাহত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। স্থানীয়রা বলেন, এর আগেও অনেকবার ফ্লাইওভারের আশপাশে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন পথচারীরা। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চক্রটি দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
এ প্রসঙ্গে গাজীপুর মেট্রোপলিটন দক্ষিণ পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এন. এম. নাসির উদ্দিন জানান, ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে পুলিশ সজাগ রয়েছে। টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে এবং নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করতে। তবে শুধু নির্দেশনায় থেমে থাকলে চলবে না, প্রয়োজন বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ।
অঞ্চলটির বাসিন্দারা বারবার এই সমস্যার কথা বললেও সমাধান দেখা যায়নি। ফ্লাইওভারের প্রতিটি বাস কাউন্টারে নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন, নিয়মিত পুলিশের টহল, সন্দেহভাজনদের তল্লাশি এবং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ গ্রহণে বিশেষ ব্যবস্থা চালুর দাবি উঠেছে। এছাড়া, রাত কিংবা নিরিবিলি সময়ে যাত্রীদের সুরক্ষায় আলোকায়ন ও সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ আরও আধুনিক ও সক্রিয় করা প্রয়োজন।
গণপরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে চলাফেরা করবে। টঙ্গী অঞ্চলে উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত অগ্রগতি চলমান থাকলেও নিরাপত্তাহীনতা সব উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। তাই প্রশাসনকে এ বিষয়ে আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে টঙ্গীবাসী আবারও স্বস্তি ও নিরাপদ পরিবেশে যাতায়াত করতে পারে।
জীবনের নিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয় -এটি নাগরিক অধিকার। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এখনই কার্যকর ভূমিকা পালন করা জরুরি, নয়তো টঙ্গীর মানুষকে প্রতিদিন আতঙ্ক আর চাপাতির ছায়ায় দিন কাটাতে হবে।
যাযাদি/ এসএম