মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং অপুরণীয় ক্ষতি সত্ত্বেও সড়ক পথে দুর্ঘটনা রোধে কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
গত ৭ দিনে ৭ জনের প্রাণহানী ও ৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সকলেই যেন হতবাক। বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, থ্রী-হুইলার, আলমসাধু, নছিমন-করিমন সবই বেপরোয়া যানবাহন, বেপরোয়া পথচারীও।
কোথাও কোনো শৃংখলা নেই, নিয়ম-নীতি নেই। তবে প্রশাসন বলছে দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৬ মে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের শুকুরকান্দি এলাকায় ড্রাম ট্রাক ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন আরো ৪ জন। নিহতরা হলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী আক্তার বানু(৪৫), গাংনী উপজেলার গাড়াডোব খাল পাড়ার কিবরিয়ার ছেলে শাহীন(৩২) ও মাইক্রোচালক পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে জামাল উদ্দীন(৫২)।
আহতারা হলেন গাড়াডোব খালপাড়ার মৃত ফজল মালিথার ছেলে আলতাফ হোসেন (৪৮) ও তার স্ত্রী উলফা খাতুন (৩৫), মা ফজিলা খাতুনকে (৬৫) এবং জাকিরুলের স্ত্রী গোলাপী খাতুন (৩৫) কে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একই দিনে গাংনী উপজেলার কামারখালী ও তেরাইলে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র মুনতাছির জামান (১২) ও কলেজছাত্র তারিক হোসেন (২৬) নামে ২ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো দু’জন।
১০ মে শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কাজিপুর গ্রামে গরু বোঝাই ট্রলি চাপায় তাসমিয়া নামের এক শিশুকণ্যার মৃত্যু ঘটে। সে কাজিপুর গ্রামের খন্দকারপাড়ার প্রবাসী জয়নাল হকের মেয়ে। ১১ মে মিনাপাড়া রাস্তায় মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে আমজাদ হোসেনের ছেলে রকি(২২) মারাত্মক আহত হয়।
সচেতন মহলের মতে, প্রতিদিনই মর্মান্তিক সব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং পরদিন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
গত কয়েক দশকে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো ভয়ংকর মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। দেশের সড়ককে নিরাপদ করতে এত পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কেন কাঙ্খিত সুফল মিলছে না।
সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ যে নিহত হচ্ছে তাই না, অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা যে মৃত্যুর মিছিল দেখতে পাই, তার লাগাম টেনে ধরার জন্য দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।
বিভিন্ন সংস্থা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কারণ হলো বেপরোয়া গতি, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, চালক-যাত্রী-পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, পরিবহণ চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব। কাজেই দেশে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে আলোচিত সমস্যাগুলোর সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরো একটি কারণ লক্ষ্যণীয়। সেটি হচ্ছে এলইডি লাইট। বিভিন্ন যানবাহনে এলইডি লাইট ব্যবহারের ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা চালকরা ওই লাইটের কারণে চোখে দেখতে পান না। ফলে হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে।
অদ্যাবদি বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশ বিষয়টি সমাধানে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মাঝেমধ্যে যৌথবাহিনী সড়কে মোটর সাইকেলের কাগজপত্র যাচাই করলেও অবৈধ কোন যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি।
মেহেরপুর ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর ইসমাইল হোসেন জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইতোমধ্যে সড়কে অভিযানে বেশ কিছু গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এলইডি লাইট ব্যবহার বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে সেগুলো খুলে নেয়া ও জরিমানা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।