হামাসের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি এক সেনার মৃতু্যদন্ড কার্যকর ও দুই বিদেশিকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ করেছে ইসরাইল। ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের মাঝে ইসরাইল রোববার এই অভিযোগ করেছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা
গত সপ্তাহে আল-শিফা হাসপাতালের কাছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সদস্য নোয়া মার্সিয়ানোর মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। হামাস বলেছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় ১৯ বছর বয়সি ওই নারী সেনা নিহত হয়েছেন। হামাস প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, তার মাথায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে, ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে তিনি বিমান হামলায় আহত হয়েছিলেন। তবে তার শরীরে আঘাত মৃতু্য ঘটানোর মতো ছিল না।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী নোয়াকে হামাসের সদস্যরা শিফা হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে হামাসের এক সদস্য তাকে হত্যা করেছে। তবে এই বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে হ্যাগারি বলেছেন, হামাসের বন্দুকধারীরা ৭ অক্টোবরের অভিযানে আটক করা বিদেশিদের মধ্যে দুজনকে আল-শিফায় নিয়ে যায়। ওই দুই জিম্মির একজন নেপালি ও অন্যজন থাই। হামাসের হাতে জিম্মি থাই ও নেপালি দুই নাগরিকের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে হ্যাগারি বলেন, এতে দেখা গেছে, একদল ব্যক্তি একজন ধাক্কা দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় মেডিক্যালের কর্মীদের অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালের ভেতরে আহত এক ব্যক্তি পড়ে আছেন। তার পাশে বেসামরিক এক ব্যক্তিকে অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে দেখা যায়। হ্যাগারির এসব দাবির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হামাসের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী বলেছিল, তারা কিছু জিম্মিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
আল-শিফার নিচে ১৮০ ফুট সুড়ঙ্গ, অস্বীকার হামাসের
এদিকে, ফিলিস্তিনের আল-শিফা হাসপাতালের নিচে ১৮০ ফুট (৫৫ মিটার) দীর্ঘ সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি সেনারা। সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম 'এক্সে' এ তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এক্স বার্তায় আইডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আল-শিফা হাসপাতালে পরিচালিত অভিযানের এক পর্যায়ে সেখানে ৫৫ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের খোঁজ পেয়েছে ইসরাইলি সেনারা। হাসপাতাল কমপেস্নক্সের ৩৮ ফুট নিচ থেকে শুরু হয়েছে এই সুড়ঙ্গটি। সুড়ঙ্গটির প্রবেশমুখ বুলেটগ্রম্নফ দরজাসহ বিভিন্ন সুরক্ষা উপকরণে সজ্জিত। সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বাইরে বন্দুক ও রকেট ছোড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।'
এদিকে, ইসরাইলের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বুর্শ। তিনি বলেন, ইসরাইলিরা গত ৮ দিন ধরে হাসপাতালটিতে অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত কিছুই খুঁজে পায়নি।
সংগঠনটির 'টেলিগ্রাম' চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনারা টানেল খুঁজে পাওয়ার যে দাবি করেছে, সেটি হাসপাতালের ভেতরে নয়, বরং হাসপাতাল থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত একটি গর্ত। ভিডিওটিতে একটি পানির কূপ এবং আরেকটি টানেলের ভিডিও জোড়া লাগিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে বলে হামাসের বিবৃতিতে উলেস্নখ করা হয়েছে।
এছাড়া দুই বন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে হামাস বলছে, গত ৭ অক্টোবরের অভিযানের দিন তাদের হাতে আটক ইসরাইলি বন্দিদের মধ্যে যারা আহত ও অসুস্থ ছিল তাদের গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এরপর সুস্থ হলে তাদের গোপন ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। কাজেই হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা যে ভিডিও ইসরাইলিরা দেখিয়েছে, তাতে হামাসের কোনো গোপন তৎপরতা ধরা পড়েনি।