ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় রাতভর ইসরাইলি হামলায় আরও ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত প্রায় পাঁচ মাসে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেল। বৃহস্পতিবার গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরাইলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজায় শহীদের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। বিবৃতিতে আরও উলেস্নখ করা হয়, এই তালিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত অন্তত ৭৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলা হামলায় উপত্যকাটিতে ৭০ হাজার ৩২৫ জন আহত হয়েছেন। হতাহতের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
জাতিসংঘ বলছে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। এছাড়াও খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখের বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম নিরাপত্তা কাউন্সিলকে জানান, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দেন, জরুরি উদ্যোগ না নেওয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।
খাবারের অপেক্ষায় ছিলেন ফিলিস্তিনিরা
গুলি চালিয়েছে ইসরাইল
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। গাজার নুসেইরাত, বুরেইজ ও খান ইউনিসে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ধীর গতিতে শিশুদের গণহত্যার সাক্ষী হচ্ছে গাজা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'আমরা সেখানে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, সে সময় ইসরাইলি সেনারা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।'
বেশ কিছু ফুটেজে দেখা গেছে, হতাহত ফিলিস্তিনিদের ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্সও প্রবেশ করতে পারছে না। বুধবার আল-রশিদ স্ট্রিটে জড়ো হয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা। আটা বহনকারী ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে তাদের সহায়তা দেবে বলে তারা অপেক্ষা করছিলেন। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, মানবিক সংস্থাগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। তাছাড়া তারাও হামলার শিকার হচ্ছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আশা করছেন, আগামী সোমবারের মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, 'আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন, আমরা যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি আছি।'
যুদ্ধবিরতির জন্য এখনও অনেক পথ
পাড়ি দেওয়া বাকি : হামাস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন যুদ্ধবিরতির কথা বললেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, ইসরাইলের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখনও বেশ দূরেই। হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান বাসেম নাইম বুধবার ইস্তাম্বুল থেকে বলেন, 'ব্যবধান এখনও বিস্তৃত। আমাদের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে অনেক পয়েন্ট (বিষয়) নিয়ে আলোচনা করতে হবে।' বাসেম নাইম বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের আশাবাদী ভঙ্গি 'ময়দানের বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়'। তিনি বলেন, 'আমেরিকানরা যদি সত্যিই আশাবাদী হতে চায়, তাহলে তাদের দ্বিচারিতার খেলা শেষ করতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'তারা (আমেরিকা) একদিকে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য বা যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য এবং অঞ্চলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়া এড়ানোর কথা বলে। কিন্তু একইসঙ্গে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার করছে। তারা ইসরাইলের জন্য ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করেছে, তারা আরও গোলাবারুদ দিয়ে ইসরাইলকে সুরক্ষিতও করছে।'
নাইম এর আগে মঙ্গলবার রাতে বলেছিলেন, হামাস এখনও আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি। তবে যুদ্ধবিরতির জট খুলতে মধ্যস্থতাকারীরা ইসরাইলি পক্ষের সঙ্গে কাজ করছেন। যদিও হামাস সম্ভাব্য চুক্তির কিছু বিষয়ে নমনীয় হতে ইচ্ছুক, তবে কেবল যুদ্ধবিরতির জন্য স্বাধীনতকামী এই গোষ্ঠীটি নিজের 'প্রধান, কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর' ব্যাপারে ছাড় দেবে না বলে নাইম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, হামাসের এমন কিছু অ-আলোচনাযোগ্য দাবি রয়েছে, যেগুলোতে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে : শুধুমাত্র মানবিক বিরতি নয় বরং একটি চূড়ান্ত এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি; গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা। বন্দি বিনিময় ও গাজার পুনর্গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে 'নমনীয়তার সুযোগ আছে' বলেও নাইম যোগ করেন। তিনি বলেন, 'হামাস যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য শুরু থেকেই দুর্দান্ত নমনীয়তা দেখিয়েছে। কারণ আমরা জানি, এই হত্যাকান্ডে একটি বাড়তি দিন মানে আরও ১০০ থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের নিহত হওয়া।' তার ভাষায়, 'গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে। আমরা জানি এর অর্থ কী। আমাদের পরিবারগুলো এখনও সেখানে আছে।' নাইম বলেন, ইসরাইল যেন সম্ভাব্য যে কোনো চুক্তি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে মিসর, কাতার, তুরস্ক, জাতিসংঘ, আমেরিকা এবং রাশিয়ার মতো গ্যারান্টারদেরও এতে যুক্ত করতে চাইছে হামাস।