রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ইসরাইল-হামাস সংঘাত

রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতি কঠিন : বাইডেন

যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের কোর্টে বল ঠেলে দিলেন বিস্নংকেন জাবালিয়ার অধিকাংশ নলকূপ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ মাথায় পড়ে পাঁচজন নিহত
যাযাদি ডেস্ক
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

রমজান মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা 'কঠিন হবে' বলে মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। গাজা উপত্যকায় গত পাঁচ মাস ধরে চলতে থাকা সংঘাত থামাতে আসন্ন রমজান মাসে কি দুই পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে? রোজ ভ্যালিতে শুক্রবার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জো বাইডেন বলেন, 'এটা বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে।' তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা

আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার থেকে গাজায় হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজান মাস শুরু হতে পারে। তবে বিষয়টি পুরোটাই চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, রমজান মাস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে সহিংসতার সম্ভাবনা নিয়েও 'আমি অনেক চিন্তিত'। এর আগে গত মঙ্গলবার বাইডেন সতর্ক করে বলেছিলেন, পবিত্র রমজানের আগে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি না হলে 'খুবই বিপজ্জনক' পরিস্থিতি হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি গ্রহণের বিষয়টি হামাসের ওপর নির্ভর করছে।

রমজান মাস বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র মাস। চলতি বছরের পবিত্র এই মাস শুরুর আগে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মধ্যস্থতাকারীরা। তবে এ প্রচেষ্টা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোতে হওয়া বৈঠক আলোচনা ভেস্তে গেছে। ওই বৈঠক অবশ্য আগেই বর্জন করে ইসরাইল।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের কোর্টে

বল ঠেলে দিলেন বিস্নংকেন

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন শুক্রবার বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার বিষয় এখন হামাসের ওপর নির্ভর করছে। পাঁচ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে নতুন একটি যুদ্ধবিরতির আশা ম্স্নান হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি এই কথা বলেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার 'স্টেট অব দি ইউনিয়ন' ভাষণে 'দ্রম্নততার সঙ্গে' ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর এক দিন পর বিস্নংকেন বলেন, এক্ষেত্রে প্রধান ইসু্য হচ্ছে হামাস। আর এই যুদ্ধবিরতির আওতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তার এবং জিম্মি মুক্তির সুযোগ থাকবে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিস্নংকেন বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে 'বল হামাসের কোর্টে রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে কাজ করছি।' তিনি বলেন, 'কিন্তু এ ব্যাপারে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে, জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য মঙ্গনলজনক হবে।'

জাবালিয়ার অধিকাংশ নলকূপ ধ্বংস

করে দিয়েছে ইসরাইল

দক্ষিণ গাজার জাবালিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ নলকূপ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। শনিবার এই তথ্য জানিয়েছেন মেয়র মাজেন আল-নাজ্জার। গাজায় পানি ও খাদ্য সংকটের মধ্যেই এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল।

জাবালিয়ার নলকূপের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মাজেন বলেন, জাবালিয়ার চারটি নলকূপের মধ্যে তিনটিই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজায় সুপেয় পানি নেই। এর মধ্যেই নলকূপকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করছে ইসরাইল। তিনি আরও বলেন, খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। তবুও গাজাবাসী খাবার পাচ্ছেন না। ত্রাণ সরবরাহের জন্য সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, উড়োজাহাজ দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে গাজাবাসীর চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। আর এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ মাথায় পড়ে পাঁচজন নিহত

গাজায় বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ মাথায় পড়ে অন্তত পাঁচজনের মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার আল-শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে এসব ত্রাণ ফেলা হয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক খাদের আল-জানুন এ তথ্য দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিমান থেকে এসব ত্রাণ ফেলা হয়েছে। তবে কোন্‌ দেশের বিমান ছিল এটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

দখলদার ইসরাইলের বর্বরতার কারণে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে আছে গাজাবাসী। অনাহারে থাকা এসব মানুষকে সহযোগিতায় গত কয়েক দিন ধরে বিমান থেকে ত্রাণ ফেলছে আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশনার পর গত শনিবার আমেরিকা বিমান থেকে প্রথমবারের মতো খাবারের ৩৮ হাজার প্যাকেট ত্রাণ গাজায় ফেলে। ওই সময় তাদের সহযোগিতা করেছিল জর্ডানও। তবে গাজার দাতব্য সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, যে পরিমাণ মানুষ অনাহারে রয়েছে, সেটির তুলনায় এই ত্রাণ কিছুই না।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রম্নপের পরিচালক রিচার্ড গোয়ান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাহায্যকারী সংস্থার কর্মীরা সবসময় অভিযোগ করে থাকেন, বিমানের মাধ্যমে ত্রাণ ফেলা ছবি তোলার জন্য খুবই ভালো সুযোগ। কিন্তু এই পন্থায় ত্রাণ পাঠানো খুবই খারাপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে