বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
নেতানিয়াহুর দম্ভোক্তি

ইরানে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শুধু ইসরাইল

সংযমের জন্য পশ্চিমাদের ঘন ঘন পরামর্শ সম্পর্কে নতুন বার্তা
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ইরানের সাম্প্রতিক হামলার জবাব কীভাবে ও কবে দেওয়া হবে- সে প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত কেবল ইসরাইল নেবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকের সঙ্গে এক বৈঠকে এ ইসু্যতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, 'আত্মরক্ষার অধিকার সবারই রয়েছে এবং আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরান ইসু্যতে পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে- সেই সিদ্ধান্ত শুধু ইসরাইল নেবে।' তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি, এনডিটিভি

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিন ইসু্যতে ইসরাইলের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্ব রয়েছে ইরানের। সেই দ্বন্দ্ব আরও ব্যাপকভাবে বেড়েছে গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে। চলমান এই বৈরিতার মধ্যেই গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিহত হন ১৩ জন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) দুই জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমিও ছিলেন। হামলার দায় এখন পর্যন্ত ইসরাইল স্বীকার করেনি। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণ যা পাওয়া গেছে, তাতে হামলাটি যে আইডিএফ করেছিল- তা পরিষ্কার।

গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি বলেছিলেন, এই হামলার জন্য ইসরাইলকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। তারপর শনিবার রাত ও রোববার ইসরাইলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের সামরিক বাহিনী। আমেরিকা, জর্ডান ও আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় বেশিরভাগ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। তবে ইসরাইলের ৯টি স্থাপনায় ইরানি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে বলে জানা গেছে।

ব্যাপক সেই হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ইসরাইল যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে পরবর্তী হামলার মাত্রা আরও ব্যাপক ও ভয়াবহ হবে।

এদিকে, ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকা ইসরাইলকে 'পাল্টা হামলা' না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ইসরাইল যদি সত্যিই এ রকম কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তা সমর্থন করবে না ওয়াশিংটন। পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশও আমেরিকার এই অবস্থানে সমর্থন জানিয়েছে।

ইরানের সেই হামলার পর বুধবার ইসরাইল সফরে গিয়েছিলেন ডেভিড ক্যামেরন ও অ্যানেলিনা বেয়ারবক। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে তারা এই ইসু্যতে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তাদের বক্তব্যের জবাবে ইসরাইলে ক্ষমতাসীন সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহুর মন্তব্য এখন পশ্চিমাদের মধ্যে এই বিশ্বাসই আরও জোরদার করবে যে, ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এবং সংযমের জন্য পশ্চিমাদের ঘন ঘন পরামর্শ সম্পর্কেও তাদের একটি বার্তা দিচ্ছে ইসরাইল।

ওই অঞ্চলে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার উদ্বেগ নিয়ে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল ইসরাইল। অন্যদিকে, পশ্চিমা নেতারাও এটা ভেবে স্বস্তি পেতে পারেন যে, ইরানের হামলার পর পাওয়া কূটনৈতিক সমর্থনকে ইসরাইলি নেতারা কাজে লাগাতে চান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার অঙ্গীকার করেছে। আর একটি প্রতিশোধমূলক জবাব দিয়ে ওই অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে সেই সমর্থন হয়তো নেতানিয়াহু হারাতে চাইবেন না- তেমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে