মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

ভেস্তে গেল আলোচনা, রাফাহতে হামলা

ইসরাইলের হামলার আগেই রাফাহর হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড় লাখো মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছেন
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ মে ২০২৪, ০০:০০
ফিলিস্তিনের গাজার শেষ নিরাপদ স্থান রাফাহর কাছাকাছি বৃহস্পতিবার অসংখ্য ট্যাংক ও সেনা জড়ো করেছে দখলদার ইসরাইল। সঙ্গে যেসব এলাকায় বাড়ি-ঘর রয়েছে সেখানে গুলি ছুড়ছে তারা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে যুদ্ধবিরতির আলোচনা কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরাইলি বাহিনী রাফাহ অঞ্চলে নতুন করে বোমাবর্ষণ করেছে। চুক্তি ছাড়াই যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ হওয়ায় ইসরাইল রাফাহতে হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা

ইসরাইলি বাহিনী বৃহস্পতিবার রাফাহ অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করেছে বলে ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা জানিয়েছেন। একজন সিনিয়র ইসরাইলি কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাতে বলেছেন, গাজায় সংঘাত থামাতে কায়রোতে চলমান পরোক্ষ আলোচনার সর্বশেষ দফা শেষ হয়েছে এবং ইসরাইল পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফাহ এবং গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশে তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ বলেছে, তাদের যোদ্ধারা শহরের পূর্ব উপকণ্ঠে ইসরাইলি ট্যাংকগুলোতে ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেট এবং মর্টার নিক্ষেপ করেছে। গাজার সবচেয়ে বড় শহুরে এলাকা রাফাহর বাসিন্দারা বলেছেন, শহরের একটি মসজিদের কাছে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং অন্যান্য আরও অনেকে আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মিনারটি ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে এবং দুটি লাশ কম্বলে মোড়ানো।

রাফাহ শহরের সাবরা এলাকায় দুটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আল-মুজাহেদিন ব্রিগেডের একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ও তার পরিবার এবং গ্রম্নপের আরেক নেতার পরিবার রয়েছেন বলে চিকিৎসক, আত্মীয়স্বজন ও গ্রম্নপটি জানিয়েছে।

ইসরাইল বলেছে, হামাস যোদ্ধারা রাফাহতে লুকিয়ে আছে। মূলত ইসরাইলের আগ্রাসনের কারণে লাখ লাখ গাজাবাসী বর্তমানে রাফাতে আশ্রয় নিয়েছেন। গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে গাজা ভূখন্ডের বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরাইল রাফাহতে পূর্ণাঙ্গ অভিযান চালাবে না বলে তারা আশা করে। এই ধরনের কোনো অভিযান হামাসকে পরাজিত করার বিষয়ে ইসরাইলের লক্ষ্য পূরণের জন্য ভালো হবে বলেও তারা বিশ্বাস করে না। মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, 'প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দৃষ্টিতে রাফাহতে কোনো ধরনের আঘাত করা ইসরাইলের সেই উদ্দেশ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে না।' কারবি বলেন, ইসরাইলের মাধ্যমে হামাসকে উলেস্নখযোগ্যভাবে চাপ দেওয়া হয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য উলেস্নখযোগ্য ঝুঁকি থাকায় সেখানে অভিযান চালানোর চেয়ে গোষ্ঠীর নেতৃত্বের অবশিষ্টাংশ খুঁজে বের করার জন্য আরও ভালো বিকল্প পন্থা রয়েছে।

ইসরাইলের হামলার আগেই রাফাহর

হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফায় এখনো পূর্ণ মাত্রায় অভিযান শুরু করেনি ইসরাইল। কিন্তু তার আগেই নগরীর হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ছে। চিকিৎসকরা জানান, রাফাহতে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে। রাফাহর পূর্বাংশে গত সোমবার থেকে 'সীমিত আকারে' আকাশ হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। সেখানে তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। তার মধ্যে মধ্যে সবচেয়ে বড় 'আবু ইউসেফ আল-নজর' হাসপাতালের বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ রেখে সেটি খালি করে দিতে হয়েছে। কারণ, ইসরাইলি বাহিনী সেখানকার কর্মীদের সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া হাসপাতালটির কাছেই লড়াই চলছে। গাজায় এখন একমাত্র এই হাসপাতালটিতে কিডনি জটিলতায় আক্রান্তদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে।

ইসরাইলি বাহিনী রাফাহর দিকে অগ্রসর হওয়ায় পাশের নগরী খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান গাজা হসপিটালে রাফা থেকে আর রোগী পাঠানো যাচ্ছে না। রাফাহ থেকে গুরুতর রোগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য খান ইউনিসের ওই হাসপাতালে পাঠানো হতো।

রাফাহর আরেকটি হাসপাতাল 'আমিরাতি মেটারনিটি হসপিটাল'। যেখানে প্রতিদিন বহু মা সন্তান প্রসব করছেন। আর কুয়েতি স্পেশালিস্ট হসপিটালের কর্মীরা জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ ছোট্ট এই হাসপাতালটিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রচন্ড অভাব। চিকিৎসা কর্মীও হাতে গোনা। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সেখানে মাত্র চারটি 'ইনটেনসিভ কেয়ার বেড' ছিল। হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক বলেন, যেভাবেই বলি না কেন, এখানকার অবস্থা আসলে এক কথায় বিপর্যয়কর।

এক লাখ মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছেন

ইসরাইল বোমাবর্ষণ তীব্র করার পর এক লাখের বেশি মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। ত্রাণ কর্মকর্তারা গাজার দক্ষিণতম শহর রাফাহ থেকে পালিয়ে আসা লোকের সংখ্যা গণনা করছেন। ৭ অক্টোবর ইসরাইলের হামলার পর গাজার অন্যান্য অঞ্চল থেকে ১৫ লাখের বেশি মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার ত্রাণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাফাহ থেকে পালানোর মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন বাস্তুচু্যত লোকদের কোনো পরিষেবা ছাড়াই অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিতে হবে। 'জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র' ছাড়াই তাদের পূর্বের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে বসবাস করতে হবে।

রাফাহতে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, 'অনেক ভয় ও আতঙ্ক রয়েছে। গাড়ি, গাধার গাড়ি, ট্রলি, পিকআপ ট্রাক এবং লোকদের হাঁটার কারণে রাস্তায় অনেক বেশি জট। কেউ কেউ এরই মধ্যে একাধিকবার বাস্তুচু্যত হয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে আশ্রয়ের জন্য উপকরণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা সহজ নয়; অন্যরা প্রথমবারের মতো চলে যাচ্ছেন।'

গত মঙ্গলবার রাফাহ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরাইলি বাহিনী। আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার রাফাহতে অন্তত ২০টি বিমান হামলা এবং ১২টি ট্যাংক হামলা চালানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে