আমেরিকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ দ্রম্নত শেষ করতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানালেও গাজায় বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই ধারাবাহিকতায় ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৩ হাজার ১৬০ জন ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি
বুধবার 'টাইমস অব ইসরাইলে' প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রাম্প গত জুলাই মাসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই বার্তা দিয়েছিলেন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজার ১৬৩ জনে পৌঁছেছে বলে বুধবার অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লাগাতার এই হামলায় আরও অন্তত এক লাখ এক হাজার ৫১০ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলেছে, অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
লেবাননের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলের
নতুন হামলায় নিহত ৩০
অন্যদিকে, লেবাননের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। কর্মকর্তাদের মতে, পূর্ব লেবাননে বুধবার (৩০ অক্টোবর) ইসরায়েলের তিনটি হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বালবেক জেলার বেদনায়েলে একটি আবাসিক বাড়িতে বিমান হামলার পর প্রাথমিক মূল্যায়নে আটজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া পশ্চিম বেকা জেলার সোহমোর শহরে ধারাবাহিক ইসরায়েলি বিমান হামলার ফলে ১১ জন নিহত এবং আরও ১১ জন আহত হয়েছেন। লেবাননের 'ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি' পরে জানিয়েছে, বালবেকের বেইট সালিবি শহরে একটি আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী বৈরুতের পাশাপাশি লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর অপারেটিভস, অবকাঠামো এবং অস্ত্রাগারকে লক্ষ্য করে এই হামলা চলছে। হিজবুলস্নাহও পাল্টা আঘাত হানছে। গত সপ্তাহে লেবাননে অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর ৭০ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। অবশ্য ঠিক কত দিনে এই সেনারা নিহত হয়েছেন, তা এই বিবৃতিতে উলেস্নখ করেনি গোষ্ঠীটি।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে হিজবুলস্নাহর
হামলায় নিহত ৫
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে হিজবুলস্নাহর হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ইসরায়েলের 'চ্যানেল ১২' জানায়, নিহতদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি কৃষক ও চার বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন। হামলাটি ঘটেছে মেতুলা সীমান্ত এলাকায়। সেখানে হিজবুলস্নাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে সংঘাত চলছে।
বৃহস্পতিবার হিজবুলস্নাহ জানায়, তারা দক্ষিণ লেবাননের খিয়ামের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একাধিক রকেট ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। চার দিন ধরে এই কৌশলগত পাহাড়ি অঞ্চলে সংঘাত চলছে।
'রয়টার্স'কে দেওয়া এক বিবৃতিতে একটি সূত্র জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীকে খিয়াম থেকে দূরে রাখতে চায় হিজবুলস্নাহ। যাতে তারা ওই অঞ্চলের ঘরবাড়ি ও ভবনগুলো ধ্বংস করতে না পারে। এরই মধ্যে সীমান্তের অন্যান্য শহরেও ইসরায়েল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। হিজবুলস্নাহ দাবি করেছে, তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলকে দক্ষিণ লেবাননের কোনো গ্রাম সম্পূর্ণ দখল বা নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়নি। অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা সীমিত স্থল অভিযান চালাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে হিজবুলস্নাহর অবকাঠামো ধ্বংসের চেষ্টা করছে।
এই হামলার পরই ইসরায়েলে মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি চলছে। কর্মকর্তারা লেবাননে ইসরায়েল ও হিজবুলস্নাহ এবং গাজায় হামাসের মধ্যকার সংঘাত বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার নতুন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল পরপর দ্বিতীয় দিনের মতো লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বালবেকের বাসিন্দাদের সর্তক করে বলেছে, তারা অঞ্চলটি খালি করে ফেলুক। বুধবার বালবেকে হিজবুলস্নাহর অবস্থানে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হয়, যেখানে ঐতিহাসিক রোমান মন্দিরও অবস্থিত।
বুধবার হোয়াইট হাউস জানায়, মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রেট ম্যাকগার্ক বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফর করবেন। তার সঙ্গে থাকবেন ইসরায়েল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী আমোস হকস্টেইন। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সফরে গাজা, লেবানন, জিম্মি, ইরান ও বৃহত্তর আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনা হবে।