শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আরও একবার অবিশ্বাসের বীজ রোপণ করেছেন ট্রাম্প

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ট্রাম্পের মারমুখী পদক্ষেপ বিশ্বের কাছে নতুন বাস্তবতা হাজির করতে যাচ্ছে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ঈশ্বর নিজে ভোট গণনা করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই বলবেন, তিনি নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন (পরাজিত হওয়ার পর)। ট্রাম্প এরই মধ্যে দাবি করে বসে আছেন, আগামী মঙ্গলবার হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ তাকে ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ডেমোক্রেটিক পার্টির দুর্গেও সঠিক বিজয়ী হিসেবে প্রকাশ করবে। ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্য আসলে দেখাচ্ছে, কীভাবে তার নির্বাচনে কারচুপির মিথ্যা দাবিগুলো অযৌক্তিকতার রাজ্যের সীমানায় প্রবেশ করেছে। তথ্যসূত্র : সিএনএন

চার বছর আগে নির্বাচনে কারচুপি করে তাকে 'ঠকানো' হয়েছেন বলে দাবি করে ট্রাম্প কয়েক কোটি আমেরিকানের কাছে বাস্তবতা পরিবর্তন করেছিলেন। এবার তিনি আগভাগেই ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য একটি ভয়ংকর হুমকি তৈরি করছেন এবং ভগ্ন বিশ্বাসের একটি ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। বিষয়টি তার নির্বাচনী মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার অনেক পর মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করতে পারে।

আধুনিক আমেরিকান ইতিহাসে সবচেয়ে কালো যুক্তি উপস্থাপন করার পর ট্রাম্প এখন ক্রমবর্ধমানভাবে নির্বাচনে জনগণের আস্থাকে বিষিয়ে তোলার দিকে ঝুঁকছেন। গত বৃহস্পতিবার নিউ মেক্সিকোতে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি এই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন, যা আদতে মিথ্যা।

ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি বিশ্বাস করি, এখানে আমরা দুইবার জিতেছি। যদি আমরা ঈশ্বরকে স্বর্গ থেকে নামিয়ে আনতে পারি এবং তিনি ভোটের গণনাকারী হতেন, আমরা এটি জিততাম, আমরা ক্যালিফোর্নিয়ায় জিততাম, আমরা অনেক রাজ্যে জয় পেতাম।'

বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্প নিউ মেক্সিকোতে দুইবারই পরাজিত হয়েছেন- ৮ ও ১১ পয়েন্টে। তার দাবি, তিনি ডেমোক্রেটদের দুর্গ বলে পরিচিত ক্যালিফোর্নিয়াতেও জয় পাবেন। কিন্তু ভোট জালিয়াতির জন্য হয়তো পারবেন না। বিষয়টি ট্রাম্পের একটি সুস্পষ্ট ও সুচিন্তিত কৌশলের অংশ, যা লক্ষাধিক ভোটারের চোখের সামনে একটি ধারণা তুলে ধরছে- নির্বাচনে কারচুপি হবে। ট্রাম্প হেরে গেলে এটি আইনি চ্যালেঞ্জের জন্য ভিত্তি তৈরি করতে পারে এবং এটি তার সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরিতেও কাজ করবে।

ট্রাম্প এরই মধ্যে রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে মিলে একটি ধারণা তৈরি করার জন্যও কাজ করছেন- তার বিজয় সুনিশ্চিত এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও ডেমোক্রেটদের বিজয় শুধুমাত্র কারচুপির মাধ্যমে হতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরে যান, তাহলে পস্ন্যান বি-এর অংশ হিসেবে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা দিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য একের পর পথ তৈরি করছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টা রিপাবলিকান পার্টির কর্মকর্তা এবং 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' কর্মীদের একটি প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলে যায়, যারা আদালতে কমলা হ্যারিসের যে কোনো বিজয়কে দুর্বল করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি তদন্তে দেখা গেছে, রিপাবলিকান পার্টির যেসব কর্মী ২০২০ সালে বাইডেনের বিজয়কে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন, তারাই এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কয়েক ধাপের পরিকল্পনা তৈরি করছেন।

ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কর্মকর্তারা পেনসিলভানিয়ায় ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সম্ভাব্য সমস্যা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমানভাবে দাবি তুলেছেন। আমেরিকার নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিরা ভোট দিচ্ছেন বলে আওয়াজ তোলা শুরু করেছেন রিপাবলিকানরা। আদতে তাদের এই দাবির কোনো অস্তিত্বই নেই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্স'র মালিক এবং ট্রাম্প সমর্থক ইলন মাস্ক এক্সে ভুয়া তথ্য ছড়াতে একরকম সাহায্য করছেন। এই ভুয়া তথ্যের প্রচার ঠেকানো নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য একরকম অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

মার্কিন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ট্রাম্পের এই মারমুখী পদক্ষেপ বিশ্বের কাছে একটি নতুন বাস্তবতা হাজির করতে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে যেই আমেরিকার গণতন্ত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক দেশই নিজেদের শাসন ব্যবস্থার জন্য মার্কিন গণতন্ত্রকে মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করে, তাদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে