আর মাত্র এক দিন বাকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কিন্তু তার আগেই ভোট কারচুপি সম্পর্কে গুজব, বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এবং সরাসরি মিথ্যা তথ্য অনলাইনে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কথিত এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত শত শত ঘটনা নিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং রিপাবলিকান সমর্থক ও গোষ্ঠীর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ডেমোক্রেটদের কাছ থেকেও অল্প সংখ্যক পোস্ট আসছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিএনএন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ম্যাসেজ বোর্ড এবং চ্যাট গ্রম্নপে নির্বাচনী জালিয়াতির শত শত অভিযোগ দেখা যাচ্ছে। এই পোস্টগুলোর মধ্যে কয়েকটি লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। পোস্টগুলো ইঙ্গিত দেয়- অ-নাগরিকদের পক্ষে ভোট দেওয়া সহজ, ভোটিং মেশিন সম্পর্কে মিথ্যা দাবি করেছে এবং ব্যালট গণনা প্রক্রিয়ায় অবিশ্বাসের বীজ বপন করেছে। একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, জর্জিয়ায় সম্প্রতি আসা হাইতিয়ানরা ভোট দিচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যম 'বিবিসি' মিথ্যা ঠিকানা এবং স্টক ফটোসহ স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছে, যা নির্দেশ করে, ভিডিওটি ভুয়া। শুক্রবার মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি 'রাশিয়ানদের দিয়ে' তৈরি করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া দাবির ঘূর্ণিঝড় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আগামী মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে গুজব মোকাবিলা করতে এবং ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হচ্ছে। কারণ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পোস্টগুলো ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের মিথ্যা দাবিকে সমর্থন করে। তাদের দাবি, সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছিলেন এবং ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে তাকে আবারও প্রতারণার মাধ্যমে পরাজিত করা হবে।
২০২৪ সালের নির্বাচনের ফল তিনি মেনে নেবেন কি-না, জানতে চাওয়া হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সময় বলেছিলেন, যদি 'সুষ্ঠু ও আইনগত এবং ভালো নির্বাচন' হয় তাহলে তিনি ফল মেনে নেবেন। কিন্তু সোমবার প্রকাশিত 'সিএনএন-এসএসআরএসে'র জরিপ অনুসারে, ৭০ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্প পরাজিত হলে ফল প্রত্যাখ্যান করবেন। চলতি সপ্তাহে, ট্রাম্প নিজেই একটি 'ব্যাটলগ্রাউন্ড' রাজ্যে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প নিজেই দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় ব্যাপক ভোটার জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। ট্রাম্প তার স্যোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেন, 'আমরা তাদেরকে পেনসিলভানিয়ায় বিরাট আকারে চিটিং করতে দেখেছি।' এ জন্য তিনি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচারও দাবি করেন। ট্রাম্পের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কর্মকর্তারা পেনসিলভানিয়ার তিনটি কাউন্টিতে আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে ভোটার রেজিস্ট্রেশন আবেদন এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন যে, নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে এমন মিথ্যা, ভ্রান্ত তথ্যের প্রচারে নির্বাচনের ফল নিয়ে মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের দিন এবং এরপরও পরিস্থিতি হুমকি এবং সহিংসতার দিকে চলে যেতে পারে। যেমনটি আগেও ঘটেছিল।
আমি জয়ী হলে তা হবে আমেরিকার
মুক্তি দিবস : ট্রাম্প
এদিকে, শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় শনিবার দক্ষিণ-পূর্বের 'ব্যাটলগ্রাউন্ড' হিসেবে পরিচিত উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্যে জনসভা করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন জরিপের উঠে এসেছে, এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ও হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর ক্যারোলিনার একটি জনসভায় প্রায় ৯০ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে সমর্থকদের কাছে আত্মবিশ্বাসের বার্তা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আপনি হয়তো অনেকবার জিতেছেন। এবারও জিতবেন নিশ্চয়। তারপরও সাবধান থাকা ভালো। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।'
সমর্থকদের উদ্দেশে রিপাবলিকান প্রার্থী আরও বলেন, 'আমেরিকা এখন অধিকৃত দেশ কিন্তু শিগগিরই তা আর থাকবে না। ৫ নভেম্বর নির্বাচন হবে আমেরিকার মুক্তির দিন। আমেরিকা মুক্তি পেতে যাচ্ছে।' সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমি কঠোর পরিশ্রম করছি, কারণ আমাদের জিততে হবে।'
অন্যদিকে, পরাজিত হলে এবারও ঝামেলা করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছে তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেট শিবির। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল এখনো মেনে নেননি ট্রাম্প। পাশাপাশি ট্রাম্প সমর্থকদের একটি বড় অংশ এখনো বিশ্বাস করেন, সেই নির্বাচনের ফল চুরি করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
উলেস্নখ্য, ২০২০ সালের ভোটের দিন সকালে নিজেকে আগাম বিজয় ঘোষণা করে উত্তেজনা তৈরি করেছিলেন ট্রাম্প। এমন পদক্ষেপ ঠেকাতে এবার ব্যবস্থা নেবে ডেমোক্রেটরা। গত বুধবার 'এবিসি নিউজে' দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হ্যারিস বলেছেন, 'ট্রাম্প যদি গণমাধ্যম ব্যবহার করে মার্কিনিদের ভুলভাল বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তা ঠেকাতে আমরা প্রস্তুত আছি।'