ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ড, লেবানন ও সিরিয়ায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে, লেবাননে নিহত হয়েছেন আরও ৩৮ জন। নিহতদের মধ্যে সাতজন শিশুও রয়েছে। আর সিরিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও সাতজন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, রোববার ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ভূখন্ড জুড়ে অন্তত ৪৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে উত্তর গাজার জাবালিয়াতে ইসরায়েলি বাহিনী একটি হামলাতেই নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজার ৬০৩ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়া এক বছরের বেশি সময় চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও এক লাখ দুই হাজার ৯২৯ ফিলিস্তিনি।
জাবালিয়া ও এর আশপাশের তিনটি হাসপাতাল ইসরায়েলি বাহিনী কয়েক সপ্তাহ ধরে অবরোধ করে রেখেছে। ইসরায়েলি বাহিনী এই হাসপাতালগুলো খালি করে ফেলার নির্দেশ দিলেও সেখানকার কর্মকর্তারা তা মানতে অস্বীকার করেছেন। হাসপাতালগুলোতে খাবার, ওষুধ ও জ্বালানি ফুরিয়ে এলেও রোগীদের ছেড়ে যেতে রাজি হননি তারা।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজার বেসামরিক জনতা ও সম্পত্তি সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলি বাহিনীর। হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, রোববার তারা জাবালিয়ার উত্তর দিকের বেইত লাহিয়া শহরে আক্রমণ চালিয়ে ১৫ ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে। তবে তাদের এ দাবির বিষয়ে ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি। বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করাও যায়নি।
অন্যদিকে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে যে অভিযান চালিয়েছে, তাতে আরও ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী বৈরুতের উত্তরে আলমাত গ্রামে হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। আলমাত গ্রামে হওয়া এই হামলায় নিহতদের মধ্যে সাত শিশুও রয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী বৈরুতের পাশাপাশি লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর অপারেটিভস, অবকাঠামো এবং অস্ত্রাগারকে লক্ষ্য করে এই হামলা চলছে।
হিজবুলস্নাহও পাল্টা আঘাত হানছে। গত সপ্তাহে লেবাননে অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর ৭০ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। অবশ্য ঠিক কত দিনে এই সেনারা নিহত হয়েছে, তা এই বিবৃতিতে উলেস্নখ করেনি গোষ্ঠীটি। লেবাননের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত তিন হাজার ১৮৯ জন নিহত এবং ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এদিকে, রোববার সিরিয়াতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কের একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনী এই বোমা হামলা চালায় এবং এতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
অবিলম্বে গাজা যুদ্ধ অবসানের
আহ্বান সৌদি যুবরাজের
গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সোমবার সৌদির রাজধানী রিয়াদে আরব ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর শীর্ষ এক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরব লিগ ও অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনের আগে দেওয়া ভাষণে ফিলিস্তিনি এবং লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। ইসরায়েলকে আর কোনো আগ্রাসন না চালাতে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরব দেশগুলোর জোট আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত-ও গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কোনো কথার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা প্রকাশ করা যায় না। তিনি বলেন, 'ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নেওয়া সব পদক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের প্রচেষ্টায় বাধা তৈরি করছে। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আমরা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারব।' আরব লিগের মহাসচিব বলেন, ইসরায়েলের চালানো সহিংসতায় বিশ্ব চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না।