সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
জাতিসংঘের প্রতিবেদন

ইসরাইলি হামলায় ভেঙ্গে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ইসরাইলি হামলায় ভেঙ্গে পড়েছে গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা
গাজায় ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি হাসপাতাল

নববর্ষের দিনেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। উত্তর গাজার জাবালিয়া এবং আল বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে আরও ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই ভারী বৃষ্টির কারণে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাজুড়ে শত শত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র পস্নাবিত হওয়ায় বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনি ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ইসরাইলি বাহিনী মানবিক সহায়তা প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতি খাদ্য ও বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকটের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। গাজা সরকারের তথ্য অফিস জানিয়েছে, বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ ও হিমপ্রবাহের কারণে বাস্তুচু্যতদের আশ্রয়শিবিরগুলোতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি ইসরাইলকে দায়ী করেছে গাজার প্রশাসন। বিবৃতিতে উলেস্নখ করা হয়েছে, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর আগ্রাসন এবং গণহত্যার কারণে মানবিক পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোও এ হত্যাযজ্ঞে অংশীদার। আমরা এ বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানাই।

এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোতে ইসরাইলি হামলার অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়। মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার কারণে ফিলিস্তিনিরা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার স্বাস্থ্য খাতে ধ্বংসযজ্ঞ এবং হাসপাতালের রোগী, কর্মী ও অন্যান্য বেসামরিক নাগরিক হত্যার ভয়াবহতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি অবজ্ঞার প্রত্যক্ষ নমুনা। ১২ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪ পর্যন্ত নথিভুক্ত বিভিন্ন হামলা পর্যালোচনা করে ওই প্রতিবেদনে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে, হামাসের ৭ অক্টোবর হামলার জবাবে শুরু হওয়া গাজা আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই প্রতিবেদককে বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি স্থায়ী প্রতিনিধি ড্যানিয়েল মেরন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেছেন, ইসরায়েল সবসময় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। তারা ভুলেও নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ইচ্ছা করে লক্ষ্যে পরিণত করে না। বরং এখানে দোষ হামাসের। বেসামরিক হাসপাতাল থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা সবাইকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিগত কয়েকদিনে গাজার একাধিক হাসপাতালে হামলা ও অভিযান চালিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানসহ বিশ্বব্যাপী সমালোচনার শিকার হয়েছে ইসরায়েল। হাসপাতালে হামলার কারণ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত হামাস। আর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে হামাসের সদস্য সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এসব অজুহাত খুব একটা মানেনি জাতিসংঘ। তবে জনসম্মুখে প্রকাশের আগে তাদের আরও তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে তারা। আহত ও অসুস্থদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সামরিক লক্ষ্যবস্তু না হলে এসব হামলা যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়বে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এছাড়া, নিয়মিত বেসামরিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হলে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পরিণত হতে পারে। ইসরাইল বরাবরই এসব পরামর্শ অগ্রাহ্য করে এসেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাবে ইসরাইলি সরকার আরও জানিয়েছে, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তারা। এরমধ্যে রয়েছে, ত্রাণ সহায়তা প্রদান, স্থানান্তরে সহায়তা করা ও অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা ইত্যাদি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাস হামলা চালালে অন্তত এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয় বলে তেল আবিব দাবি করে আসছে। জিম্মিদের গাজায় নিয়ে যায় হামাস। হামলার জবাবে গাজায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

নতুন বছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে ইসরাইলি ভূখন্ড লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে হামাস। মধ্যরাত পার হয়ে বুধবার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ জানায়, গাজা থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে দু'টি রকেট ছোড়া হয়েছে। ইসরাইলি সংবাদপত্র জেরুজালেম নিউজ জানায়, স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টার ঘর অতিক্রম করার পর নতুন বছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজার সীমান্ত এলাকাগুলোতে রকেট হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। আইডিএফ বলেছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা আয়রন ডোম ব্যবহার করে একটি রকেট প্রতিরোধ করেছে আর অপর রকেটটি খোলা জায়গায় পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে