বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রম্নডোর পতনের কারণ

অটোয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জাস্টিন ট্রম্নডো বলেন, লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই থাকবেন। আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট মূলতবির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, 'পরবর্তী নির্বাচনে সত্যিকারের পছন্দের কাউকেই চায় দেশ'
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:১২
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রম্নডোর পতনের কারণ
জাস্টিন ট্রম্নডো

কানাডার ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকে অবশেষে সরে গেলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রম্নডো। অটোয়ায় সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই থাকবেন। আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট মূলতবির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, 'পরবর্তী নির্বাচনে সত্যিকারের পছন্দের কাউকেই চায় দেশ।' ২০১৩ সালে এমন এক সময় ট্রম্নডো লিবারেল পার্টির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন দলটি গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। সে সময় হাউস অফ কমন্সে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গিয়েছিল লিবারেল পার্টি। ট্রম্নডোর প্রস্থানে নতুন করে নেতৃত্ব সঙ্কটে পড়বে তার দল। আর সেটা এমন সময়ে ঘটছে, যখন আগামী অক্টোবরের নির্বাচনে কনজারভেটিভদের কাছে লিবারেলদের বাজেভাবে হারার পূর্বাভাস দিচ্ছে বিভিন্ন জনমত জরিপ।

বিবিসি লিখেছে, নিজ দলের ভেতরে ও বাইরে পদত্যাগের চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন ৫৩ বছর বয়সী ট্রম্নডো। দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, তার পদত্যাগ সেই উত্তাপ কমিয়ে আনতে পারে। ট্রম্নডো বলেন, তার নেতৃত্বের চারপাশে বিরোধ দূর করে উত্তাপ কমিয়ে আনার বিষয়টি তিনি ভেবেছেন। সেইসঙ্গে এমন সরকারের কথা তিনি ভাবেন, যেটি জটিল বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিবে।

1

তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে উত্তরসূরী হিসেবে কে আসছেন, সেই প্রশ্নও এখন সামনে আসছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য উত্তরসূরীদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, ব্যাংক অব কানাডা ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধান মার্ক কার্নি ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রাক্তন প্রিমিয়ার ক্রিস্টি ক্লার্ক। ট্রম্নডোর পদত্যাগের ঘোষণায় মার্ক কার্নি ও ক্রিস্টি ক্লার্ক এক্সে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দল ও দেশের নেতৃত্বের জন্য দুজনেই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রম্নডো এক দশক আগে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। অথচ সোমবার মেয়াদ শেষ না করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। দলের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে এই সিদ্ধান্ত নেন ট্রম্নডো। রাজধানী অটোয়ায় নিজের বাসভবন রিডো কটেজের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। কিন্তু কীভাবে একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এমন সংকটে পড়লেন? ট্রম্নডোর জনপ্রিয়তা কেন এত নিম্নমুখী হলো, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

২০২৪ সালে কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি জনজীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং আবাসন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। ট্রম্নডোর সরকার এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে ট্রম্নডোর লিবারেল পার্টি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু দুর্যোগ পরিস্থিতি তার 'পরিবেশবান্ধব' নেতৃত্বের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফেডারেল বাজেট প্রস্তাব তার নিজ দল এবং বিরোধী পক্ষ উভয়ের কাছ থেকে সমালোচিত হয়। বাজেট প্রস্তাবে প্রগতিশীল গোষ্ঠীর চাহিদা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি ট্রম্নডোকে জনগণের সঙ্গে 'সম্পর্কহীন' একজন নেতা হিসেবে চিত্রিত করেছে। প্রদেশগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা তহবিল নিয়ে আলোচনা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ট্রম্নডোর সরকার সমালোচিত হয়েছে। এই বিষয়টি স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে তার সরকারের সম্পর্ক দুর্বল করেছে।

২০২৪ সালের জুনে টরন্টোতে একটি বিশেষ নির্বাচনে লিবারেল পার্টি তাদের সবচেয়ে নিরাপদ একটি আসন হারায়। অক্টোবর মাসে লিবারেল পার্টির ২০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা ট্রম্নডোকে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী পদে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। বর্তমানে হাউজ অব কমন্সে লিবারেলদের আসন সংখ্যা ১৫৩। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই শুল্ক মাদক ও অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে চাপ তৈরি করবে। এটি কানাডার অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং ট্রম্নডোর জনপ্রিয়তাকে আরও দুর্বল করতে পারে। কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন। ট্রম্নডো তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ নিতে বলার পর তিনি পদত্যাগ করেন। ফ্রিল্যান্ড প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কানাডার প্রধান বাণিজ্য আলোচক ছিলেন। ট্রম্নডোর অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগীও ছিলেন তিনি। তবে বাজেট এবং সম্ভাব্য মার্কিন শুল্ক নিয়ে মতবিরোধ তার পদত্যাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে