বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২
হামাসের সপ্তাহব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ

গাজায় ১০ ইসরাইলি সেনা নিহত

ফিলিস্তিনে ত্রাণ সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য জাতিসংঘ ও ইসরাইলের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গাজায় ১০ ইসরাইলি সেনা নিহত
নিহত ইসরাইলি সৈন্যদের চারজন -ইন্টারনেট

ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞে প্রাণহানি ছাড়াল ৪৬

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে হামাসসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে দখলদার ইসরাইলের সেনারা। সেখানে গত এক সপ্তাহে ১০ সেনার মৃতু্য হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র শনিবারই প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। এছাড়া আহত হয়েছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার উত্তর গাজায় তিনজন, এর আগের দুইদিনে তিনজনের মৃতু্য হয়। আর সর্বশেষ শনিবার একসঙ্গে চারজনের মৃতু্য হলো। এরমাধ্যমে গত তিন মাসে উত্তর গাজায় মোট ৪৮ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। আর সবমিলিয়ে যুদ্ধে প্রাণ গেছে ৪০২ দখলদারের।

ইসরাইলের সঙ্গে ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে হামাসের যুদ্ধ চলছে। তবে এবার এই যুদ্ধের সমাপ্তি চাচ্ছেন ইসরাইলি সেনাদের বাবা-মায়েরা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে খোলা চিঠি লেখেন ৮০০ বাবা-মা। এতে তারা বলেছেন, 'আমরা আপনাকে আমাদের সন্তানদের বলি হতে দিতে পারি না। সেনাবাহিনীর গাজায় অবস্থানের কোনো কারণ নেই। গাজায় যে যুদ্ধ হচ্ছে সেটির কোনো দিগন্ত নেই। এমন যুদ্ধ আমাদের ইতিহাসে নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে আপনি এ যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন।' শনিবার যে চারজনের মৃতু্য হয়েছে তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এক সশস্ত্র যোদ্ধা। এরপর তাদের লক্ষ করে গুলিও ছোড়েন তিনি।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইলি বর্বর হামলায় কমপক্ষে আরও ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি। শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরও ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৫৩৭ জনে পৌঁছেছে বলে শনিবার অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরও অন্তত এক লাখ ৯ হাজার ৫৭১ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৩২ জন নিহত এবং আরও ১৯৩ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

অপর দিকে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডবিস্নউএ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হলে সে শূন্যস্থান পূরণের দায়ভার নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে জাতিসংঘ ও ইসরায়েল। চলতি মাসের শেষ দিকে ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিলিস্তিনে সংস্থাটি তাদের কাজ পরিচালনা বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।

ফিলিস্তিনে এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইউএনআরডবিস্নউএ। তবে ইসরাইলি ভূখন্ড থেকে কাজ করতে ও দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ৭৫ বছরের পুরোনো সংস্থাটির কী হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। গত অক্টোবরে নিষেধাজ্ঞা আইনটি অনুমোদিত হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘ ও ইসরাইল পাল্টাপাল্টি একাধিক চিঠি পাঠিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইউএনআরডবিস্নউএ কাজ বন্ধ করলে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে সংস্থাটির সেবা প্রতিস্থাপন করা তাদের দায়িত্ব নয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, ইউএনআরডবিস্নউএ-কে কাজ বন্ধে বাধ্য করলে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরাইলকেই সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের অন্য সংস্থাগুলি ফিলিস্তিনিদের জন্য সেবা ও সহায়তা চালিয়ে যেতে প্রস্'ত। তবে এই অজুহাতে ইসরায়েল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে না। পূর্ব জেরুজালেমসহ গাজা ও পশ্চিম তীরকে ইসরাইলি অধিকৃত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, অধিকৃত অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রমে সম্মতি দেওয়া এবং খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যেরর মান বজায় রাখা তাদের দায়িত্ব। ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘে পাঠানো এক চিঠিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন দাবি করেছেন, নতুন সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই আন্তর্জাতিক আইন মানতে ইসরাইলের দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিপন্থি নয়। তবে ইউএনআরডবিস্নউএ্থর কার্যক্রম বন্ধ হলে ইসরায়েলের দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেনি ইসরায়েল। ফলে তারা দখলদার নয় আর আন্তর্জাতিক আইনটি তাদের ওপর খাটে না। আর পশ্চিম তীরে বেসামরিকদের দেখভালের দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের। পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে ড্যাননের দাবি, সেখানকার সব অধিবাসী ইসরায়েলি আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সরকারি ও পৌর সুবিধা ভোগের অধিকারী। পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইল নিজেদের ভূখন্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েলহাজার ৫০০

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে