বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় যুদ্ধ বিরতির ঘোষণায় ফিলিস্তিনিদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

লোকজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ, ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছে স্মরণীয় মুহূর্তগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গাজায় যুদ্ধ বিরতির ঘোষণায় ফিলিস্তিনিদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস
যুদ্ধবিরতিতে উলিস্নসিত ফিলিস্তিনিরা

গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার খবরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার বুধবার এই চুক্তির ঘোষণা দেয়। যদিও ইসরাইল জানিয়েছে, এখনো কিছু বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে গাজায় এরই মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। লোকজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করছেন। ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছে স্মরণীয় মুহূর্তগুলো। গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা রন্দা সামিহ বলেন, এই দুঃস্বপ্নের শেষ হওয়ার কথা শুনে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। আমরা সব কিছু হারিয়েছি মানুষ, ঘরবাড়ি, জীবন। তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে প্রথমেই তিনি তার পরিবারকে দেইর আল-বালাহর কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। সামিহ'র কথায়, তাদের ঠিকভাবে কবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার আমরা সঠিক কবর তৈরি করবো এবং তাদের নাম ফলকে লিখবো। এদিন দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের সামনে ভিড় করে শত শত মানুষ স্স্নোগান দেন এবং ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে উদ্‌?যাপন করেন। হাসপাতালের দিকে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্সের পথ ছাড়তে গিয়ে মানুষের মুখে 'আলস্নাহু আকবর' ধ্বনি ওঠে। এসময় এক সাংবাদিককে ভিড়ের ওপর কাঁধে তুলে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। একই সময় গাজার অন্যান্য এলাকাগুলোতেও শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। খান ইউনিসে দেখা যায়, একদল যুবক কাঁধে চড়ে ঢাক বাজিয়ে স্স্নোগান দিচ্ছেন। ২৭ বছর বয়সী আবদুল করিম জানান, সব হারানোর পরেও আজ আমি খুশি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আমি আমার স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে দেখতে পাবো। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলি এবং ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময় করা হবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৭০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। একই সময়ে হামাসের নেতৃত্বে চালানো হামলায় ইসরাইলে কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করা হয়।

এদিকে গাজায় টানা ১৫ মাসের সংঘাতের পর অবশেষে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চিত করেছেন, এই চুক্তি আগামী রোববার থেকে কার্যকর হবে। তবে চুক্তি ঘোষণার পরও গাজায় ইসরাইলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক এবং ফিলিস্তিনি ইনফরমেশন সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। প্যালেস্টাইনিয়ান সিভিল ডিফেন্সের মতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে ইসরালি বাহিনী হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে। আল-জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে চালানো হামলায় অন্তত ৮২ জন নিহত হয়েছেন।

এর আগে, বুধবার রাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল থানি। হামাসের শীর্ষ নেতা ইজাত আল-রিশেক বলেছেন, কাতারের রাজধানী দোহায় যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তাতে হামাসের সব শর্ত মেনে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফেরা এবং যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি। এই চুক্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, এই চুক্তি 'জিম্মিদের ও তাদের পরিবারের দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘব করবে।' ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৭০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে