বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উনিশ থেকে চব্বিশ

মো. মমিনুর রহমান
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
উনিশ থেকে চব্বিশ

ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩ মার্চ, ২০১৯। সেদিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর মাহেন্দ্রক্ষণ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ১০৩ নম্বর কক্ষে আমাদের প্রথম মহামিলন। আকাশসম স্বপ্ন আর উচ্ছ্বাস নিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের নতুন এক যাত্রা। আমরা তখন ছিলাম একঝাঁক আলোকরশ্মি-নাম রেডিয়েন্স-১১, যারা ভবিষ্যতের আলো ছড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে একত্র হয়েছিলাম। সেই দিন থেকে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর আমরা একসঙ্গে পথ চলেছি। আমাদের পথচলা কখনো মসৃণ ছিল, কখনো কাঁটায় ভরা। আনন্দ, বেদনা, অর্জন আর চ্যালেঞ্জের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জীবনের গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

শুরুর দিনগুলো

প্রথম ক্লাসে এসে আমরা বুঝতে পারি, এ শুধু পড়ালেখার যাত্রা নয়; বরং এটি হলো নিজেকে গড়ে তোলার এক মহাযাত্রা। বন্ধুত্ব, পরিচয় আর নানা রকম অনুভূতির আদান-প্রদান আমাদের এক সুতোয় বেঁধে ফেলে। কেউ স্বপ্ন দেখত সিভিল সার্ভিসে কাজ করার, কেউবা গবেষণার মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন আনার। এই বহুমাত্রিক স্বপ্নগুলোই আমাদের একটি অনন্য পরিচয় দেয়।

ক্লাসরুমের গন্ডি পেরিয়ে

শুধু পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না আমাদের জীবন। রেডিয়েন্স-১১ নামের আলোক মিছিলের প্রতিটি সদস্য সমাজের নানা কর্মকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিল। ক্যাম্পাসের বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কালচারাল প্রোগ্রাম, সেমিনার কিংবা শিক্ষাসফর-সবখানেই ছিল আমাদের অংশগ্রহণ। এই সবকিছু আমাদের শুধু একাডেমিক জ্ঞানেই নয়, সামাজিক বোধ আর দক্ষতাতেও সমৃদ্ধ করেছে।

চ্যালেঞ্জ আর সাফল্য

প্রতিটি অধ্যায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে। কখনো পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে হতাশা, কখনো ব্যক্তিগত জীবনের সংগ্রাম। কিন্তু দলবদ্ধভাবে আমরা সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। আমাদের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে অনেক পালক। কেউ ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্র, কেউ জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় জয়ী, আবার কেউ ভবিষ্যতের গবেষক।

সাড়ে পাঁচ বছরের বন্ধন

২০১৯-২০২৪ এই দীর্ঘ সময় আমাদের বন্ধন শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা একে অপরের পরিবারের মতো হয়ে উঠেছিলাম। ক্লাসের আড্ডা, গ্রম্নপ স্টাডি, একসঙ্গে টিফিন করা, উৎসব পালন-এই প্রতিটি ক্ষণই আমাদের স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।

একটি বিদায়, নতুন শুরু

আজ আমরা একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছি। সাড়ে পাঁচ বছরের এই যাত্রার শেষে আমাদের প্রতিটি সদস্য যেন হয়ে উঠেছে একেকটি আলোকশিখা। ভবিষ্যৎ জীবনে আমরা হয়তো ভিন্ন ভিন্ন পথে হাঁটব, কিন্তু রেডিয়েন্স-১১ নামটি চিরকাল আমাদের স্মৃতিতে থাকবে।

এই দীর্ঘ যাত্রা আমাদের শিখিয়েছে, স্বপ্ন বড় হতে হয়, আর পথ যতই কঠিন হোক, একসঙ্গে চললে সবকিছু সম্ভব। আমাদের এই দলটি শুধু একটি ব্যাচ নয়; এটি একটি পরিবারের মতো। বিদায়ের দিন যতই কাছাকাছি আসছে, ততই হৃদয় ভারী হচ্ছে। কিন্তু এও তো সত্য, শেষ মানেই নতুন শুরুর বার্তা।

উনিশ থেকে চব্বিশের অমলিন স্মৃতি

রেডিয়েন্স-১১ শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি সময়কাল, একটি আবেগ। ২০১৯ সালের সেই মার্চ মাসের একটি দিন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আজকের এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা যেমন নিজেদের তৈরি করেছি, তেমনি একে অপরের প্রেরণা হয়েছি। আমাদের যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ একটি গল্পের মতো, যা কখনো মলিন হবে না।

আজ বিদায় বেলায়, আমরা শুধু একটি ব্যাচের পরিচয় নয়, একটি আত্মার বন্ধনের স্মৃতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি ভবিষ্যতের পথে। সাফল্যের আকাশে যেন প্রতিটি রেডিয়েন্স সদস্য আলোর ঝলকানি ছড়াতে পারে-এই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা। 'বিদায়, রেডিয়েন্স-১১। স্মৃতি হয়ে থেকো চিরকাল।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে