দেশের স্বার্থ সবার আগে
মারুফ হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকবর্গের শোষণের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে এ দেশের মানুষ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এবং দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। যে স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ; সে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ কি পেয়েছে এদেশের মানুষ? এ সহজ উত্তরটি সবারই জানা। সব বৈষম্য ও শোষণ থেকে মুক্ত হতে তাইতো এ দেশের ছাত্র-জনতা একযোগে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে। তাদের স্বপ্ন- নতুন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের। এ স্বপ্ন যেন বাস্তবায়িত হয়। ২৪-এর রক্তক্ষয়ী অভু্যত্থান ও শহীদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। বর্তমানে দেশের হাল ধরেছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। জনগণ চায় প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বাদ।
সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হোক
নাঈমা আক্তার রিতা
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
২৪-এর জুলাই বিপস্নবের সবচেয়ে আলোচিত ও চোখে পড়ার মতো বিষয় ছিল নারীদের অংশগ্রহণ। তারা পুরুষের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মিছিলের সামনের সারিতে, পুরুষের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের গুলির সামনে। বিপস্নবোত্তর সময়ে খুব সচেতনভাবে আমাদের নারীদের সব গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে বাদ দেওয়া শুরু হয়েছে। তাদের অতীতের মতো আবারও পুরুষকে প্রেরণা ও শক্তি জুগিয়েছে বলে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে; অথচ নারীরা নিজেরাই যে শক্তি, তারাই যে বীর যোদ্ধা, তাদের অবদান যে পরোক্ষ নয়, বরং প্রত্যক্ষ, তা স্বীকার করতে বরাবরই নারাজ এই সমাজ। বিপস্নবোত্তর সময়ে শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র আধিপত্য লক্ষ করা যাচ্ছে প্রায় সবখানে। সব সময়ই শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসম তুলনার মাধ্যমে বাকিদের পিছিয়ে রাখা হয়। এই মহান বিজয় দিবসে প্রত্যাশা থাকবে, আমরা যেন সত্যিকার অর্থেই বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করতে পারি।
ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ
জান্নাতুল ফেরদৌস কবিতা
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করে এসেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি; ২৪-এর ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থান সেটাই প্রমাণ করে। বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হয়েছে দুই হাজারের অধিক তাজা প্রাণের বিনিময়ে; আহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও অধিক ছাত্র-জনতা। জনগণের রক্তের উপর দিয়ে যে বিপস্নব সংঘটিত হয়েছে জনগণের স্বার্থেই যেন সেই বিপস্নবের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়। অসাম্যের বিলোপ সাধন করে নতুন আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ গড়তে পারলে সেটিই হবে আমাদের চূড়ান্ত বিজয়।
বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, নতুন বিজয়ের মাসে
সুষ্মিতা ভট্টাচার্য্য মৌ
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করেছি। এই মাসটি আমাদের জন্য অনন্য প্রেরণা নতুন স্বপ্ন দেখার। জুলাই বিপস্নবের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য ও দুর্নীতি। সেই সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নতিসাধন হবে। দ্রব্যমূল্যের দাম জনসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে থাকবে। সবাই নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ার দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। একটি সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন, বিজয়ের মাসে আমরা সবাই শপথ করি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সবাই মিলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব।
দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রয়োজনীয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও চুক্তি
হারুন উর রশিদ
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আজ রাজপথে ধ্বনিত হয় দিলিস্ন না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা। ভারতের শোষণমূলক ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী আচরণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ আর ভারতের বলয়ে নেই। ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থনে আমাদের ঘাড়ে চড়ে বসেছিল গত ফ্যাসিস্ট সরকার, যাকে হটানোর জন্য ২০০০ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ভারত গত ৫৩ বছরে আমাদের দেশের সঙ্গে করদ রাজ্যের মতো যে আচরণ করেছে, তা আজ জনগণের কাছে স্পষ্ট। তবুও বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আমরা স্বাধীনতার ৫৪ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। এরই মধ্যে দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানান পটপরিবর্তন হয়েছে। তাই জুলাই বিপস্নবোত্তর এমন একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কোনো রাষ্ট্র, বিশেষ করে ভারতের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রয়োজনীয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও চুক্তি হবে ন্যায্যতা ও ইনসাফের ভিত্তিতে।
৭১ থেকে ২৪
সায়েশা সুলতানা সাদিয়া
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি স্বৈরাচারের হাত থেকে নতুন বাংলাদেশের জন্মের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। সম্প্রতি ছাত্র-জনতাকে সামনে রেখে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট তারিখে আরেকটি দেশীয় স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে জাতি। অনেকে এটাকে স্বাধীনতার দ্বিতীয় বিজয় বলেও আখ্যা দিয়েছেন। হবে না-ই বা কেন! কত প্রাণ গিয়েছে এই স্বাধীনতা উদ্ধার করতে, তার ইয়ত্তা নেই। নতুন স্বাধীনতা-পরবর্তী আমাদের একমাত্র চেতনা হওয়া উচিত দেশপ্রেম বুকে ধারণ করা, দেশের এবং দেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করা। এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন মনোভাব নিয়ে পালিত হোক। ৭১ এবং ২৪-এর ত্যাগকে সামনে রেখে শুধু এবারের বিজয় দিবস হয়ে উঠুক শহীদদের ত্যাগের রঙে রঙিন।
বিজয় হোক শিক্ষার মানোন্নয়নে
মুহাম্মাদ রিয়াদ উদ্দিন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এদেশের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয়। বিজয়ের তেপান্ন বছর পেরিয়ে চুয়ান্ন বছরে পদার্পণ আনন্দের বিষয় হলেও দীর্ঘ এ সময়ের ব্যাপ্তিতে এদেশের অনেক ক্ষেত্রে আমূল কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। তার মাঝে এদেশের শিক্ষার খাতটি বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। বিশাল জনসংখ্যার এদেশে শিক্ষার খাতটি এখনো অবহেলিত। অথচ এ বিশাল জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিগত তেপান্ন বছরে এদেশে যত্রতত্র স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও আদতে শিক্ষার কোনো মানোন্নয়ন হয়নি। বিজয়ের এ মাসে আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষাব্যবস্থা হবে মানসম্মত, যুগোপযোগী ও কর্মমুখী।