শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায় নিজের দেশ ও জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে। ভ্রমসংশোধনের জন্য মন-ভ্রমণ। ভ্রমণ অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে, অপূর্ণতাকে পূর্ণ করতে সাহায্য করে। অজ্ঞতার পরিবর্তে নতুন জ্ঞানের সন্ধান, কুসংস্কার রূপ অন্ধকার থেকে আলোর জগতে উত্তরণের নিশানা দেয় ভ্রমণ। মনের উদারতা, হৃদয়ের প্রসার ও বিস্তৃতির জন্য ভ্রমণ একান্ত প্রয়োজন। সেই ভ্রমণ যদি হয় শিক্ষা সফরে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। তাই তো একদল শিক্ষার্থী মিলে ঘুরে এলাম বগুড়ার মহাস্থানগড়। বগুড়ার প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড় হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী। এক সময় এই নগরীটি ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। পূর্বে এর নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর। বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। সময়টা ছিল ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রংপুরে 'ঊষা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং-রংপুর'-এ ভর্তি হয়েছিলাম। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর চলে আসে বাঙালির প্রিয় উৎসব পহেলা বৈশাখ। তখন ১ বৈশাখ উপলক্ষে কোচিং থেকে পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল। স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল বগুড়া মহাস্থানগড় এবং তার আশপাশের কিছু দর্শনীয় স্থান। যেই ভাবা সেই কাজ। পিকনিক উপলক্ষে সবাই যেন ঈদের মতো কেনাকাটা শুরু করতে লাগল। অবশেষে পিকনিকে যাওয়ার ডেট ঘনিয়ে এলো। তারিখটা ছিল ১৬ এপ্রিল। তবে আমাদের কোচিংয়ের টিচার সবকিছুতে ছাড় দিলেও পড়ালেখায় কখনো কোনো ছাড় দিতেন না। তাই পিকনিকেও নাকি অ্যাসাইনমেন্ট পরীক্ষা নেবেন তিনি। সেই মজার মুহূর্তে এসব প্যাড়া কার ভালো লাগে বলেন। তারপর অনেক বলার পর আর সময় না থাকার কারণে টু্যরে সব রকমের পরীক্ষা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল ঠিক ভোরবেলা সবাই রেডি হয়ে কোচিংয়ে চলে আসি। সেখানে এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে, সকাল ৮-৯টার মধ্যে সবাই বাসে উঠে পড়ি এবং যার যার সিট সে সেখানে বসে পড়ে। সেদিনের সকালটা এত সুন্দর ছিল যে কি বলব। সব ফ্রেন্ডরা একসঙ্গে, অন্য পরিবেশে তারপর একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, একে অন্যকে খাইয়ে দেওয়ার মতো দৃশ্য সব যেন এখন স্মৃতির পাতায় বন্দি। এ স্মৃতি কোনোদিন ভোলার নয়। কোচিংয়ের সামনে থেকে প্রায় সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর বাস ছেড়ে দেয় গন্তব্য স্থানের দিকে। বাসের ভিতরে আড্ডা, গান, গল্প সবই চলছিল। একপর্যায়ে ঘণ্টা দুয়েক পর বাস তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছায়। সেখান থেকে সবাই এক জায়গায় হয়ে সবার মতো ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর মহাস্থানগড়ের ভিতরে প্রবেশ করি। কিন্তু কি বলব দুঃখের কথা পুরা মরুভূমির মতো জায়গা। আন্দাজ করেছিলাম কত কি আছে কিন্তু দেখার মতো মাটিগুলো ছাড়া আর কিছু নেই। তবে পুরো বাউন্ডারি ঘুরে বেশ ভালোই লেগেছে। মনে হয় চৈত্র মাসের প্রখর রোদগুলো সব ওইখানে বিচরণ করছিল। একপর্যায়ে ঘোরাঘুরি করে হাঁপিয়ে গেলে সেখানের আমগাছের তলায় বসে রেস্ট নেওয়া হয়। আর সেখানে অনেকেই অনেক রকম পারফরম্যান্সও করে। সব থেকে ভালো লেগেছে শাহ আলম ভাই, লিপন ভাই, আতিক ভাই, রাজু ভাই, রুবেল ভাই, হাবিনা এনাদের ডান্স এবং অভিনয়গুলো। গান, গল্প, আড্ডা অভিনয়ের পর্ব শেষ করে আমরা খাওয়া-দাওয়ার পর্বে চলে যাই। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, খোলা পরিবেশে এরকম আনন্দ, হই-হুলেস্নাড় করে আর কিছু হয়তো এজীবনে হবে না আর। খাওয়া-দাওয়া শেষে আরেকবার রেস্ট নিয়ে আবারও বেরিয়ে পড়ি ঘোরাঘুরি করতে। মহাস্থানগড়ের উঁচু উঁচু লাল মাটি, খেজুরগাছ, সেখানে ছবি উঠানো, রৌদ্রে ঘুরে বেড়ানোর এমন দৃশ্য এখনো মনকে দোলা দিয়ে যায়। তারপর একে একে ভাসু বিহার, বৌদ্ধ বিহার, বেহুলার বাসর ঘর, জিয়ৎ কুন্ড, হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বখলি মাহিসাওয়ারের (রা.) মাজার শরিফ, সেখান থেকে আবার মহাস্থানগড় জাদুঘরে। মহাস্থানগড় খনন করে গুপ্ত, মৌর্য, সেন ও পালবংশীয় যুগের যেসব প্রস্তর খন্ড ও দেব-দেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে তার সবই এই জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। আরও দু-একটি জায়গায় যাওয়া হয়েছিল। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন নগররাষ্ট্র এবং তার ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নস্থল হিসাবে সমগ্র বিশ্বের পর্যটন কেন্দ্রটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাতো বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। প্রথম সবাই একসঙ্গে থাকলেও পরে আলাদা হয়ে যে যার মতো ঘোরাঘুরি করতে লাগল। বিশেষ করে আমরা ৬ জন একসঙ্গে ভালো সময় পার করেছি সেখানে। (বিথী, নিশি, রাসেল, সুজন, রাশেদ)। সেটা শুধু পিকনিক ছিল না ছিল জীবনের সেরা দিন। আজও স্মৃতি আছে কিন্তু বন্ধুরা নেই। সবাই এখন বিভিন্ন স্থানে। ভালো থেকো সবাই। সবার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল। হয়তো কোনো একদিন দেখা হবে সবার সঙ্গে এই অপেক্ষায় দিনযাপন করছি।
সিনথিয়া সুমি
শিক্ষার্থী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ