সশিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। সুন্দর একটি জাতি গঠনে প্রয়োজন পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবসস্থায় ত্বাত্তিক শিক্ষার প্রতি যতটা গুরুত্ব প্রদান করা হয় ততটা ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি ততটা গুরুত্ব প্রদান করা হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সঙ্গে বাস্তবতার মিল কমই খুঁজে পায়। এতে করে এ শিক্ষা শিক্ষিত বেকার তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞান বিভাগসহ অন্যান্য বিষয়ে ব্যবহারিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তা সঠিকভাবে শিখনকার্য ও মূল্যায়নের অনীহার কারণে তার যথার্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
ত্বাত্তিক শিক্ষা যেমন কোনো বিষয়বস্তুর আলোচনা, বিশদ বর্ণনা থাকে, ব্যাখ্যা প্রয়োগিক আলোচনা, উদারণ দেওয়া থাকে। ফলে শিক্ষার্থীর মনোজগতে সেই বিষয়ের প্রতি একটি কাল্পনিক ভিত্তি তৈরি হয়। ব্যবহারিকভাবে যে বিষয়গুলো উপস্থাপন ও সম্পাদনের সুযোগ রয়েছে তা যদি শিক্ষার্থীকে সম্পাদনের সুযোগ দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে তার দেহ ও মন দুইটির মাধ্যমে সেই শিক্ষা গ্রহণ করা হয় বলে সেই শিক্ষাটি মনন ও মগজে সেটি স্থায়ীভাবে একটি প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়। যার দরুণ পরবর্তীতে অনুরূপ সৃষ্টিশীল কোনো কর্মে আত্মনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে তারা কোনো না কোনো বিষয়ে তারা দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। কিছুদিন পূর্বে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের 'ব্যবহারিক শিক্ষা জরুরি কেন, সে প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীদের যে হাস্যকর ও অবান্তর উত্তর পেয়েছিলাম তা দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বিষয়ের প্রতি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই বিজ্ঞানাগার, নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, নেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, ফলে ব্যবহারিক শিক্ষাটা চলছে দায়সারা গোছের ভাবে। যেহেতু শিখন কার্যক্রমে ঘাটতি তাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে ব্যবহারিক মূল্যায়নও হয় নামমাত্র। শিক্ষার্থীর যথাযথ যোগ্যতা অর্জন না হলেও নাম্বার প্রাপ্তিতে কমতি নেই। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের ত্বাত্তিক বিষয়ের মতো তদারকিও উলেস্নখযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীরা সহজে পূর্ণ নাম্বার পায় বলে তারা ব্যবহারিক বিষয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা মনোনিবেশ করে না। সব মিলিয়ে বলা যায় এ ধরনের শিক্ষা গ্রহণের ফলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে আর প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে শিক্ষিত বেকার। আশার কথা হলো নতুন কারিকুলাম যেটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণিতে হতে যাচ্ছে সেটি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে হয়ত শিক্ষিত বেকার তৈরির আশঙ্কা কমে যাবে।
সর্বোপরি যদি ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ না করা হয় আর যোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত না করা যায়, তাহলে যেকোনো শিক্ষা ব্যবস্থার ফলপ্রসূ উন্নতি লাভ দুঃসাধ্য হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শাহাদৎ হোসেন
আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।