শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ

বাংলাদেশ এখন প্রায় সতেরো কোটি মানুষের একটি বড় অভ্যন্তরীণ বাজার। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেজাউল করিম খোকন
  ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ

অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি তিনটি। সেগুলো হলো- বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ স্থাপন। এগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্থানীয় বিনিয়োগের সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগও উন্নয়নের ধারায় বিশেষ অবদান রাখে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের দরকার ওই তিনটি চালিকাশক্তি। এগুলো হচ্ছে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সংযোগ বৃদ্ধি। এজন্য দরকার হবে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ এবং সব পর্যায়ে ডিজিটাল মাধ্যমের সর্বোচ্চ ব্যবহার। এছাড়া দরকার বিনিয়োগ নীতিকাঠামো সহজ ও আধুনিক করা। তবে, আন্তর্জাতিক করব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেশীয় করব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোই হলো মূল চ্যালেঞ্জ। দেশের উন্নয়নের সূচনালগ্ন থেকে একটি প্রতিযোগিতামূলক দেশ হিসেবে নিজেদের গঠন করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। এছাড়াও লক্ষ্য ছিল বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এখন লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেদের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা দেশ হিসেবে গড়ে ওঠবে এবং এটিই দেশের অন্যতম শক্তি হবে। তাই বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির জন্য অনেক ধরনের বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন করতে হবে। গত দুই দশকে দেশে বড় ধরনের রূপান্তর হয়েছে। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে দরকার এখন পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ। কারণ, দেশটিকে আমাদের আগামী প্রজন্মের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। সব প্রকল্প এমনভাবে নিতে হবে- যাতে দীর্ঘ মেয়াদে তার সুবিধা ভোগ করা যায়।

পরিবেশ, সমাজ ও করপোরেট সুশাসন (ইএসজি) এ তিন খাতে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে কপ-২৮ সম্মেলনের আগে এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ীরা পরিবেশ, সমাজ, করপোরেট সুশাসন, বিদু্যৎচালিত গাড়ি, জলবায়ু, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংশ্লিষ্ট খাতের এ বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। বিনিয়োগ সংস্থা সিএফএ ইনস্টিটিউটের মতে, উন্নত বাণিজ্য কৌশল ও টেকসই সূচক নিয়ে কপ-২৮ সম্মেলনে আলোচনা করা হবে। এসবের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বিশেষ করে অর্থবিহীন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা গেলে তা ঝুঁকি প্রশমন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হতে পারে। ইএসজিতে বিনিয়োগ ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এটার পরিপ্রেক্ষেপিত ১৪০ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। এ পূর্বাভাসে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতিফলন রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং উপসাগরীয় দেশগুলো পরিবেশ, সমাজ ও করপোরেট সুশাসন অনুশীলনে এগিয়ে থাকতে চায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত টেকসই উন্নয়ন এবং ইএসজি অর্জনে অগ্রগতি করেছে। এটা এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি নতুন ধারা তৈরি করবে। এ প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা ইএসজি সূচকের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। তারা ইএসজি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। ইএসজি সূচক সাধারণত কোম্পানির ব্যবসায়িক স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করে। এসব মূল্যায়ন ও চিহ্নিত করার জন্য একটি কাঠামো প্রয়োজন। এ কাঠামো কোম্পানির পরিবেশগত প্রভাব, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের মানকে মূল্যায়ন করবে। অবশ্য কপ-২৮ নতুন মান নির্ধারণ করে দিতে পারে। এটা করা গেলে কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন মানদন্ড হিসেবে কাজ করতে পারে ইএসজি। অন্যদিকে, সবুজ সূচক প্রায় ৩০টি নিরাপত্তা ঝুঁকি নির্দেশ করে। এগুলো ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সুশৃঙ্খলিত পদ্ধতির পরামর্শ দেয়। এর মাধ্যমে স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখে পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এটি সতর্কতার সঙ্গে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করে। এ আর্থিক প্রণোদনার পূর্বাভাস কপ-২৮ জলবায়ু এজেন্ডার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ বাড়িয়ে দেবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ীদের জন্য এ কৌশলগুলো পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের অংশ।

বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পুঁজির প্রবাহকে সহজতর করতে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে আমাদের বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রম্নত বর্ধনশীল অর্থনীতির ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে একটি লাভজনক বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া দরকার। স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে এনবিআর, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব অঙ্গসংস্থা। বিনিয়োগ ও ব্যবসাবাণিজ্য সহজ করতে এসংক্রান্ত নীতিগুলো সব সময় হালনাগাদ করাতে হবে। ভালো বিদেশি বিনিয়োগ পেতে সরকারের নীতি পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা না থাকা, করদাতাদের ওপরই আরও করারোপ এবং সব কোম্পানির জন্যই বিদ্যমান শুল্ক ব্যবস্থা বড় ধরনের সমস্যা। বিদু্যৎসংযোগ পেতেই দেশে অনেক সময় লেগে যায়। তবে অনেক সমস্যা থাকলেও ভবিষ্যতে সুযোগের হাতছানিও কম নয়। ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত সাত অঙ্গরাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশ- এটা একটা বড় বাজার এবং এ বাজারের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ভালো বিদেশি বিনিয়োগ পেতে পারে। বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তায় চলমান প্রকল্পগুলোর প্রায় অর্ধেক জাপানি। আরও জাপানি কোম্পানি এ দেশে নতুন নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশের উন্নয়নের গৌরবময় যাত্রায় অংশীদার হতে জাপান সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছে। বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অংশীদার কোরিয়া। শ্রমবাজারকে সুগঠিত করে প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করলে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের নীতিকে আরও সংশোধিত করলে কোরিয়া ছাড়াও বিশ্বের অন্য দেশও এখানে আসবে।

বর্তমান সরকার বৃহত্তর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। আরও বেশি পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে আসতে পারে সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এককভাবে কোনো দেশ যদি একখন্ড জমি চায় আমরা তাও দেব, আবার যদি কেউ যৌথ উদ্যোগে করতে চান সেটাও করা হবে অথবা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে করতে চাইলে সেটাও করা হবে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকার অনেকগুলো সংস্থা তৈরি করেছে- যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথোরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথোরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথোরিটি (এইচটিপিএ) ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথোরিটি (পিপিপিএ)। বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোয় ওয়ান স্টপ পরিষেবাও চালু করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরিষেবা প্রদানকারী সব অফিস সম্পূর্ণ অনলাইন এবং ডিজিটালাইজড করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছ। একই সঙ্গে কর মওকুফ, রেমিট্যান্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকারের অনেকগুলো সংস্থা ও বিভাগ। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ এ সরবরাহ খাত, চতুর্থ শিল্পবিপস্নবসংশ্লিষ্ট খাত এবং পর্যটন খাতকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বস্নু-ইকোনমি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। লজিস্টিক শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এ খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে অন্য সব শিল্প খাতের উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে জাতীয় লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহণ খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতেই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ও শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাইছে সরকার।

বাংলাদেশ এখন প্রায় সতেরো কোটি মানুষের একটি বড় অভ্যন্তরীণ বাজার। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

\হ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলারে। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার, কৌশলগত অবস্থান, উচ্চ মুনাফা, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মোট জনগোষ্ঠীর ৭৮.৫৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রি-ল্যান্সার রয়েছে- যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। আইসিটি রপ্তানি খাতে ২০২৩ সালে আমরা অর্জন করেছি ১.৯ বিলিয়ন ডলার। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এ খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লাখ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০.৩১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খাত ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে ব্যক্তি খাতে ভোগ বৃদ্ধি- যাকে প্রাথমিকভাবে সহায়তা করছে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শক্তিশালী গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ ও জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বিনিয়োগ সেবার মান উন্নত করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, অধিক বিনিয়োগ মানে অধিক কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে যাওয়া। অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিপুল আয়োজন নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অবস্থান। আমাদের ইমেজ সংকট রয়েছে। এটাকে সামগ্রিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ব্রান্ড ভ্যালু অনেক কম। ইনভেস্টররা বাংলাদেশের কথা শুনলে মনে করে এই দেশ অনেক গরিব কিংবা দুর্যোগকবলিত দেশ। এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ করতে হবে। প্রয়োজনে গেস্নাবাল পিআর এজেন্সি নিয়োগ করে বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে হবে। আমরা গরিব দেশ নই, উন্নয়নশীল ও বিনিয়োগবান্ধব- এটা সবাইকে বোঝাতে হবে। সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে