বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে অনুমোদনহীন ভবন

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ১১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রাজধানীতে অনুমোদনহীন ভবন

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ভবনে ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। কোনোটি ধসে পড়ছে, কোনোটিতে ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, কোনোটি আবার হেলে পড়ছে। আর দুর্ঘটনার পর দেখা যায়, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা অনুমোদনহীন ভবন কতটা আশঙ্কাজনক তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, প্রতি বছর রাজধানীতে বাড়ছে অনুমোদনহীন ভবনের সংখ্যা। আর এটি কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় যারা অনুমোদন নিয়েছেন, এর মধ্যে ৯০ ভাগেরই নেই অকুপেন্সি বা ব্যবহারের সনদ। যার কারণে নকশার বিচু্যতি করে গড়ে ওঠা এসব ভবনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও জানা যাচ্ছে। রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন একরকম নিলেও সেটি মানা হচ্ছে না। আর এমন পরিস্থিতিতে রাজউক বলছে, এসব ভবনের বিচু্যতি নিয়ন্ত্রণে বারবার নোটিশ দেয় তারা। গত বছর রাজউকের পক্ষ থেকে বিচু্যতি প্রতিরোধে ১ হাজার ৮৯০টি ভবনে উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করা হয়।

আমরা বলতে চাই, যদি প্রতি বছর রাজধানীতে অনুমোদনহীন ভবনের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক সেটি অনুধাবন করতে হবে। কেননা, অনুমোদনহীন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এমনটি ভাবা অমূলক নয়। উলেস্নখ করা দরকার, ২০২২ সালে গেজেটভুক্ত হওয়া রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) জরিপের তথ্যমতে, রাজউক এলাকায় প্রায় ২১ লাখ ৪৫ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একতলা থেকে বহুতলা ভবন রয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার। এসব ভবনের মধ্যে মাত্র ২ লাখের অনুমোদন রয়েছে, বাকি প্রায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ভবনের কোনো অনুমোদন নেই। পাশাপাশি ১৬ লাখের বেশি সেমিপাকা ভবনও অবৈধ। রাজউকের আওতাধীন এলাকা ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার, সাভার উপজেলা, কেরানীগঞ্জ উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ, ভুলতা ও গাউছিয়া।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে যে চিত্র সামনে আসছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। রাজউক সূত্র বলছে, দুই সিটির ভেতরে যেসব স্থানে অবৈধ ভবন রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ডেমরা, বসিলা, ঢাকা উদ্যান, কামরাঙ্গীরচর, সারুলিয়া, নাসিরাবাদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান, হরিরামপুর, ভাটারা, বাড্ডা ও পুরান ঢাকা। আর ঢাকার দুই সিটির বাইরে সাভার, কেরানীগঞ্জ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শত শত ভবন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। ফলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা এড়ানো যাবে না। এছাড়া এটাও আমলে নেওয়া দরকার, নগরবিদ ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নেওয়ায় নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা নজরদারি করা যাচ্ছে না। কোনো ভবন মালিক অনিয়ম করে নকশায় পরিবর্তন আনলেও তা ধরা পড়ছে না। ফলে, নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও তা চিহ্নিত হচ্ছে না। আর ভবন ব্যবহার সনদ না নিলে রাজউক থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির নেই। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। স্মর্তব্য যে, যখন জানা যাচ্ছে, নকশার বিচু্যতি করে গড়ে ওঠা ভবনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে তখন তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অনুমোদনহীন ভবন কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ভবনে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা দুর্ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঘটছে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। ফলে, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে