সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিকারার্থে সরকারকে আরও কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে

আমরা অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনার পর কেবল প্রতিক্রিয়াই লক্ষ করি। আসলে আমাদের কাজটা করে দেখাতে হবে। রোগ হলে যেমন চিকিৎসা দিতে হয়, তেমনই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও দেখার বিষয়।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

আগুন হলো মানবসভ্যতার একটি উপকরণ। আগুন আজ যানবাহন চলাচলে, ইলেকট্রিসিটি উৎপাদনে এবং আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগুন ছাড়া বর্তমান সভ্য জগৎ চলতে পারে না। অথচ এ আগুন প্রতি বছর প্রচুর জানমালের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এর কারণ যদি আমরা খুঁজি তবে দেখতে পাব আমাদের অজ্ঞতা ও অসর্তকতা এই ক্ষতির জন্য দায়ী। আগুন দুর্ঘটনা আমাদের একটি নাগরিক ভাবনায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে অগ্নিদুর্যোগ একটি মারাত্মক দুর্যোগ। ঘন ঘন মহড়া, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ চিহ্নিত করে রাখার পরামর্শ দেন দমকল কর্মীরা। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অগ্নিদুর্ঘটনার সংখ্যা লক্ষাধিক, যাতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তাদের তথ্যমতে অগ্নিকান্ডের প্রধান কারণগুলো তিনটি- বৈদু্যতিক গোলযোগ, চুলা থেকে লাগা আগুন এবং সিগারেটের আগুন। যত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তার ৮০ শতাংশই ঘটে এ তিনটি কারণে। অনেক সময়ই অবহেলা ও অবজ্ঞার ভাব নিয়ে মানুষ কিছু কিছু ভুল করে থাকেন। আর এহেন কতিপয় তুচ্ছ ভাবনা থেকে এমন কিছু অঘটনা ঘটে থাকে- যার পরিণতি ভয়াবহ ও মারাত্মক। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা অনুসারে, নিয়ম লঙ্ঘন করে পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা চালিয়ে নিতে ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। টিআইবির গবেষণা থেকে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা স্থাপনে লাইসেন্স প্রদান বা নবায়ন বন্ধ থাকলেও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে লাইসেন্স বের করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের অসাধু কর্মকর্তাদের পরামর্শে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে রাসায়নিক শব্দটি বাদ দিয়ে এন্টারপ্রাইজ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স বের করে নেয়। রাসায়নিকের ব্যবসায় অনাপত্তিপত্র, লাইসেন্স, ছাড়পত্র নেওয়া বা নবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে।

দেশে একের পর এক কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থজনিত কারণে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণ দুর্ঘটনায় মানবিক বিপর্যয়সহ ধনসম্পদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হলেও ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি, পরিদর্শন ও নজরদারির অভাব রয়েছে। তাছাড়া দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং কলকারখানা মালিকপক্ষের উদাসীনতা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং ফায়ার সেফটি গাইডলাইন মেনে না চলা সর্বোপরি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ভিকটিম হচ্ছে সাধারণ নাগরিক। দেশে বিভিন্ন সময়ে বারবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও সরকারি কর্তৃপক্ষ ও মালিকপক্ষের উদাসীনতা, অবহেলা এবং দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে দুর্ঘটনা যেন সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ দুর্ঘটনা রোধে তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও সুনির্দিষ্ট কিছু কাঠামোগত পদক্ষেপ নিলে সেই সব দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু নানা কারণে এই অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো না নেওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে।

বাংলাদেশে খুব কম ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার জন্য কোনো কারখানা, যানবাহন, কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে অনুমোদন ও তদারককারী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহি ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়! বিশ্বের যেসব দেশে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়, সেসব দেশে দুর্ঘটনার হার অনেক কম। বাংলাদেশে এমন কোনো জবাবদিহিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি বলেই দুর্ঘটনার কাঠামোগত ভিত্তিগুলো দিনের পর দিন দুর্বল হয়েছে। যে কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হলো দুর্ঘটনার পূর্বশর্ত ও অন্তর্নিহিত কারণগুলোকে নির্মূল করা, যেন দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। আর যদি কোনো কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেই যায়, সে ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত করে তার পেছনের কারণগুলোকে উন্মোচন করা এবং ভবিষ্যতে আর যেন এরকম দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে তার জন্য যথাযথ সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলাদেশে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে সড়ক-নৌ-রেল পথে, কর্মস্থলে, আগুনে পুড়ে, রাসায়নিক বিস্ফোরণে নানাভাবে মানুষ নিহত ও জখম হয়, প্রাণ-প্রকৃতি বিপন্ন হয় কিন্তু সেই সব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য দুর্ঘটনার বিভিন্ন পূর্বশর্ত ও অন্তর্নিহিত কার্যকারণ শনাক্ত করে তা দূর করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় না। দুর্ঘটনার পর রুটিন অনুসারে এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেসব তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিদ্যমান ত্রম্নটিপূর্ণ ব্যবস্থা বা অব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য লাভজনক, ফলে এসব গোষ্ঠীর প্রভাবে কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধানের পথে বাধা তৈরি হয়। আবার দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য যে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হয় তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক হলেও তাৎক্ষণিক লাভ-লোকসান বিবেচনায় অনেকেই এই বিনিয়োগটুকু করতে চায় না। আর এ কারণেই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি এক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি দেখে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বা ক্ষতিপূরণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না, তাহলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিনিয়োগের কোনো তাগিদ সেই প্রতিষ্ঠানের থাকে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আইসিইউ ইউনিটে সংঘটিত অগ্নিকান্ড এবং ইতিপূর্বে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের অগ্নিকান্ড দুর্ঘটনার পর জানা যায়, রাজধানীর ৪২৩টি হাসপাতালের মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ১০৫টিসহ মোট ৩১৮টি হাসপাতালই আছে অগ্নিঝুঁকিতে। মাত্র ৭টি হাসপাতালের অবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেশির ভাগ হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে কীভাবে তা নেভানো হবে, রোগীদের কীভাবে অন্য স্থানে সরিয়ে নেবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। দ্রম্নত রোগী নামানোর ঢালু সিঁড়ি নেই। ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট ছাড়া নিজেদের খুশিমতো বহুতল ভবনে হাসপাতাল করে রোগী ভর্তি করছে অনেকে। দিনের পর দিন বহু হাসপাতাল গড়ে উঠলেও হাসপাতালের লিফট-সিঁড়ি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে আগুন লাগলে দ্রম্নত রোগী ও স্বজনদের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। চুরিহাট্টা, নিমতলী, গুলশান, বনানী সীতাকুন্ড অগ্নি ট্র্যাজেডিতে যে তদন্ত প্রতিবেদন হয়েছে, এগুলোর প্রতিবেদনের কোনো ফলোআপ আছে কি? এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে হবে। যত প্রভাবশালী ও শক্তিশালী গোষ্ঠী হোক না সব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করা হলে দোষী ব্যক্তিরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাবে আর নিরীহ শ্রমজীবী মানুষের লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রে তা কখনো কাম্য হতে পারে না।

\হদেশে এখন যেভাবে ভবন/মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে উপদেশ বা পরামর্শ কোনো কাজে আসে না। উন্নত দেশগুলোতে অনেক নিয়ম-কানুন আছে। নতুন ভবনের ক্ষেত্রে সঠিক নকশা ও নির্মাণ পদ্ধতি অনুসরণ করলে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু ইতিমধ্যে যেসব ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়? এটা বর্তমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইতিমধ্যে নির্মিত অধিকাংশ ভবনের কাঠামোগত পরিবর্তন জটিল ও ব্যয়বহুল, পারফরম্যান্স-বেইজড রেট্রোফিটিং করা যেতে পারে। আমাদের শহরগুলোতে বিশেষত সুউচ্চ ভবনের এলাকাগুলোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন এবং বিদ্যমান ভবনে পর্যাপ্ত পানির আধার বা ট্যাংক না থাকলে দু-একটি তলা ভেঙে ফেলে পানির আধার নির্মাণ করা যেতে পারে। বাস্তবসম্মত বিকল্প ব্যবস্থা না করা গেলে উপযুক্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে অধিবাসীদের বহির্গমনের গতিবিধি সিমুলেট করে ভবনের যত তলা পর্যন্ত মানুষের নিরাপদ বহির্গমন সম্ভব হবে, তত তলাই ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে। আগুন ও ধোঁয়া যাতে ছড়াতে না পারে এবং করিডর ও সিঁড়িঘরে যাতে আগুন ও ধোঁয়া ছড়াতে না পারে, সে জন্য পর্যাপ্ত ফায়ার সেপারেশন ও ধোঁয়া নির্গমনপথের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ফায়ার ড্যাম্পার ব্যবহার করতে হবে। সুউচ্চ ভবনের ক্ষেত্রে ফায়ার লিফট রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বহুতল ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা ও নিয়মিত ফায়ার ড্রিল অনুশীলনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিস বিভাগ নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে ফায়ার সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। মোটকথা, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলতে হবে, ভবনগুলোকে নিরাপদ করতেই হবে।

আমরা অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনার পর কেবল প্রতিক্রিয়াই লক্ষ করি। আসলে আমাদের কাজটা করে দেখাতে হবে। রোগ হলে যেমন চিকিৎসা দিতে হয়, তেমনই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও দেখার বিষয়।

এ ক্ষেত্রেও তাই। ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়াতে টিআইবির ১০ দফা সুপারিশমালা বাস্তবায়ন প্রণিধানযোগ্য যেমন-যে কোনো দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রাসায়নিক বিপর্যয় রোধে জাতীয়ভাবে একটি রাসায়নিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং রাসায়নিক নিরাপত্তা বিষয়ে নির্দেশিকা তৈরি ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে; ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করতে হবে অথবা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদি সময় দিয়ে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে; পুরান ঢাকার অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করতে হবে; রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক ও স্বচ্ছ করতে হবে; আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজউক, কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় ক্ষমতা আইনে নিশ্চিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাদের জনবল এবং উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা এখন জরুরি প্রয়োজন। এছাড়া ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সেফটি কোড অনুসরণ, ভবনের বাসিন্দাদের নিয়মিত ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করা এবং আবাসিক এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের জন্য প্রশস্ত রাস্তা থাকাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস চাইলে সহযোগিতা করবে। আগুন লাগলে কী করতে হবে না হবে, সব তারা দেখিয়ে দেবে। সর্বোপরি অসতর্কতা অগ্নিকান্ডের প্রধান কারণ। তাই নিজেরা সচেতন হলে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে