সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

নতুনধারা
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস সংকটের বিষয়টি বার বার আলোচনায় এসেছে। এছাড়া এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তীব্র গ্যাস সংকট মোকাবিলা করছে দেশ। আর জানা যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি সংকট নিরসনে নিদারুণ আশা জাগাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পেট্রোবাংলা। কেননা, ইতোমধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের শাহাজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র আশার আলো আরও উজ্জ্বল করেছে। যেখানে এই গ্যাস ক্ষেত্রের খননকাজ শেষ হয়ে এখন চলছে ডিএসটি টেস্টের কাজ। প্রাথমিকভাবে কূপটির তিনটি জোনে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। অন্যদিকে, পেট্রোবাংলা ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে- যা জ্বালানি খাতকে সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। আমরা মনে করি, সম্ভাবনার এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলার সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগরের ২৪টি বস্নকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ৫৫টি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া দূতাবাসগুলোতে চিঠি দিয়ে দরপত্রের বিষয়ে জানানোর কথা রয়েছে পেট্রোবাংলার। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কপ-২৬ এ ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সবুজ জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে বাংলাদেশ। আর সেই রূপান্তরকে মসৃণ করার জন্য আরও দুই দশক প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন দেশের। এ পরিস্থিতিতে গ্যাস হাইড্রেট আবিষ্কার বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

বলা দরকার, গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি পূরণে শিল্প ও বিদু্যৎ উৎপাদন চলমান রাখতে বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। আর জানা যাচ্ছে, এ কারণে গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস খোঁজা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, তথ্যমতে, ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয় বাংলাদেশের। এতে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশের সব প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি বস্নক আছে। এসব বস্নকে দেশের প্রায় ১০০ বছরের গ্যাস মজুত রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা আমলে নেওয়া দরকার, সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ। যা সুখকর নয়। যদিও ২০১০ সালে গভীর সাগরে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ বস্নকে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় কনোকো ফিলিপস। তারা দু'টি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। এরপর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। অন্যদিকে, প্রায় চার বছর পর গত বছরের জুলাইয়ে নতুন পিএসসি চূড়ান্ত অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এখন একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দু'টি বস্নকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। এ দু'টি বাদ দিয়ে বাকি ২৪টি বস্নকে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান আশা জাগাচ্ছে- এই বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। অনুসন্ধান জোরদার করা এবং তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া এটাও আলোচনায় এসেছ যে, আগামীতে টিকে থাকার জন্য সামুদ্রিক অর্থনীতিই হবে মূল কেন্দ্র। সঙ্গত কারণেই বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টিও সামনে এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণ তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে