সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

দফায় দফায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। সর্দি-কাশি জ্বরের ক্যাপসুল ও সিরাপ, গ্যাস্ট্রিক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন এবং অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। গত মাসের শেষদিকে গ্যাস্ট্রিকের যে ক্যাপসুলের পাতা ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। গ্যাস্ট্রিকের প্রোগ্যাভি ২০০ এমএল সিরাপ ২৫০ থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। টার্বোক্লাভ ৫০০ এমজি পস্নাস ১২৫ এমজি প্রতি পিস ক্যাপসুল ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত রসুটিন ১০ মিলিগ্রামের এক পাতার ১৫টির দাম ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা। অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল অপটিমক্স ৪০০ মিলি গ্রাম ট্যাবলেট এক মাসের ব্যবধানে দুই দফায় দাম বেড়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের ৭৪ শতাংশই রোগী নিজস্ব উৎস থেকে মেটায়। আবার চিকিৎসা ব্যয়ের বড় অংশই ওষুধে ব্যয় করছে বাংলাদেশের মানুষ। মৌসুমি রোগের চিকিৎসায় মানুষের যে ব্যয়, তার ৬৩ শতাংশই চলে যায় শুধু ওষুধ কিনতে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিকে ওষুধের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার কারণ হিসেবে দায়ী করছে ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের ওষুধের বাজারে প্রায় ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিকের ২৫ হাজার, ৩০ হাজার প্রোডাক্ট চালু আছে। এর মধ্যে ১১৭টি জেনেরিকের ৪৬০টি ওষুধের দাম ওষুধ প্রশাসন নির্ধারণ করে। ওষুধের পেছনে বছরে গড় খরচ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ছয় ভাগ বিনামূল্যে পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

এ কথা সত্য, ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওষুধ রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানি কারক দেশে পরিণত হয়েছে দেশ। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার। দেশে এখন ২৫৭টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ১৫০টি সক্রিয়ভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক সংবাদের মধ্যে দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, ওষুধের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বাজার তদারকির কেউ নেই। আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।

গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। তবে এভাবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে