সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

ফেসবুক শুধু বিনোদন নয়, ক্ষতিরও কারণ

মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম হাটহাজারী চট্টগ্রাম
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ফেসবুক শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয় এই প্রজন্মের এমন তরুণ-তরুণী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ফেসবুক যেন তার অদৃশ্য আকর্ষণে তার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় সবাইকে। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীরা বিনোদন খুঁজতে গিয়ে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে। এবং এই ফেসবুকের অপব্যবহারের মাধ্যমেই তারা নিজেরাও যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনই ক্ষতি করছে অন্যদেরও। ডিজিটাল দিবস উপলক্ষে ইউনিসেফ আয়োজিত এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, দেশের ২৫ শতাংশ শিশুই ১১ বছর বয়সের আগেই ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করে। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়স্ক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ২৮১ জনের ওপর চালানো এই জরিপে দেখা যায় শিশুরা ইন্টারনেটে সব চেয়ে যে দুটি কাজ করে তা হচ্ছে অনলাইন চ্যাটিং ও ভিডিও দেখা। আর এইসব শিশু-কিশোররা প্রথমেই পা দেয় ফেসবুকে। তবে এখন প্রতিবাদ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে মিছিল মিটিং সবকিছুই হচ্ছে ফেসবুকে। ব্যবসা-বাণিজ্য বিনোদন আমন্ত্রণ সবকিছুতেই ফেসবুক। শুধু তাই নয় ফ্রি ডাক্তারি সেবাও মিলে এই ফেসবুকে। বারংবার মুঠোফোনে কল করেও যার সাক্ষাৎ মিলে না তাকেও দেখা যায় ফেসবুকে। ফেসবুকে ছবি আপলোড করা ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানই যেন আজ পূর্ণতা পায় না। পড়াশোনা গবেষণা সবকিছুর জন্যই এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা বেছে নিয়েছে ফেসবুককে। মুহূর্তের মধ্যে যেকোনো খবর সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ফেসবুকের কল্যাণে। মেটার সর্ব শেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে দৈনিক গড় ব্যবহারকারীর সংখ্যা (ডিএইউএস) ছিল ১৯৩ কোটি। সেই হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ৪ শতাংশ বা ৭ কোটি বেড়েছে।

বাংলাদেশে ফেসবুক চালু হয় ২০০৬ সালে। এবং গেস্নাবাল ডেটা ফার্ম স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪৭ লাখ। মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। দিনকে দিন বেড়েই চলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

ফেসবুকের প্রধান প্রধান ক্ষতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : সময় নষ্ট করা, হতাশা আর বিষণ্নতা, বন্ধু হয়ে ওঠে পরশ্রীকাতর, ভ্রান্ত ধারণা আর গুজব ছড়িয়ে পড়া, দাম্পত্যে জটিলতা, আইনি জটিলতা, একাকিত্ব বোধ হওয়া, শারীরিক সমস্যা, আচরণের সমস্যা, সামাজিক দক্ষতা কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগের লক্ষণ বেড়ে যাওয়া এবং পেশাগত বা একাডেমিক জীবনে সমস্যা ইত্যাদি। এছাড়া ব্যক্তি বিশেষ আরও বহু সমস্যা তো আছেই। একটা সময় শিশু-কিশোররা স্কুল শেষে বাড়িতে এসে বাবা-মা, বৃদ্ধ দাদা-দাদি, নানা-নানুর সঙ্গে গল্পের আসর জমাতো। নয়তো বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ত খেলার মাঠে। সেই বাবা-মা, বয়স্ক দাদা-দাদি আর খেলার মাঠ এখন অসহায়ের মতো পড়ে আছে। শিশু-কিশোরদের তাদের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই। সবাই ফেসবুক ও ভিডিও গেমে মত্ত। ফেসবুকের প্রতি অতিশয় নিমগ্নতার দরুন আত্মীয়স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে মিশাও হয় না তরুণ-তরুণীদের। মাথা ধরা ও মেজাজ খিটখিটে থাকায় ভালো কথা বললেও খারাপ লাগে। আপাতত ফেসবুকই দুশ্চিন্তার হেতু। কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরা এমন এক প্রজন্ম গড়ে উঠছি যাদের টনক নির্বাপিত, যারা হুজুগে মত্ত ও সহজেই উত্তেজিত। ফেসবুকের অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবহারে মূল্যবোধ হারিয়ে আমরা এক মূল্যবোধহীন নির্বোধ জাতিতে পরিণত হতে যাচ্ছি। তাই ফেসবুক নিয়ে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া দরকার। আলস্নাহ আমাদের জন্য সবকিছু কল্যাণকর করে দিক আমিন।

মুহাম্মাদ রাহাতুল ইসলাম

হাটহাজারী

চট্টগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে