শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক রপ্তানি বেড়েছে

উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
নতুনধারা
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পোশাক রপ্তানি বেড়েছে

তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের মধ্যে অন্যতম। সঙ্গত কারণেই এই খাতের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। যে কোনো কারণেই হোক পোশাক রপ্তানি কমা কিংবা কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হলে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম। এর সঙ্গে সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে না পারার বিষয়টি যোগ হয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে পণ্য পরিবহণ ব্যয়। বাড়বে পণ্য পৌঁছানোর সময়ও। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের ক্রেতারা পোশাকের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আদেশ হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মূলত সিরিয়ার দামেস্কে নিজেদের কনসু্যলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ নিতে গত রোববার ইসরায়েলে সরাসরি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ এ উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে সময় মতো পণ্য হাতে না পাওয়ার শঙ্কায় ইউরোপের ক্রেতারা তাদের কাছাকাছি কোনো দেশে রপ্তানি আদেশ দিতে পারে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।

আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং আশঙ্কার বিষয়গুলো মাথায় রেখে এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বলা দরকার, জানা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত বছর রপ্তানি কমেছিল ২৫ শতাংশ। চলতি বছরেও কমছে। গত ফেব্রম্নয়ারি শেষে রপ্তানি কমার হার দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশ নেতিবাচক ধারা থেকে বেরোতে না পারলেও অপর দুই প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনাম এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১১৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। যদিও গত জানুয়ারিতে রপ্তানি ৩৬ শতাংশ কমে। তবে রপ্তানি কমলেও বাজার হিস্যায় বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফেব্রম্নয়ারি শেষে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। এই বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। আমরা মনে করি, এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

বলা দরকার, যেহেতু বাংলাদেশের আয়ের অন্যতম প্রধান খাত হলো তৈরি পোশাক। ফলে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং এই খাতে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। এর আগেও বিভিন্ন ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ডলারের বাজারে অস্থিরতায় রেমিট্যান্স কমার পাশাপাশি দেশের রিজার্ভ কমায় পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতেও গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা হিমশিম খেয়েছেন বলে জানা গিয়েছিল। এছাড়া করোনা মহামারি প্রায় প্রত্যেকটা খাতকেই বিপর্যস্ত করেছিল। তৈরি পোশাক খাতেও এর প্রভাব পড়েছিল। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট শুরু হওয়ায় আবারও উত্থান ধারায় ছেদ পড়ার আশঙ্কাও সামনে আসে। ফলে এখন যখন পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে আবারও শঙ্কার বিষয় সামনে আসছে তখন তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে দেশের পোশাক খাতের ধারাবাহিক অগ্রগতিক নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। শঙ্কার বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবনমান এবং নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতি বজায় রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে