বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গণপিটুনিতে হত্যা বাড়ছে রোধে সঠিক পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
গণপিটুনিতে হত্যা বাড়ছে রোধে সঠিক পদক্ষেপ নিন

দেশে গণপিটুুনিতে হত্যা বেড়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে গণপিটুুনিতে হত্যা ৪১ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১৯ সালে রেনু হত্যার পর এপর্যন্ত গণপিটুুনিতে নিহত হয়েছেন ২২৪ জন। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বগির বিল এলাকায় ডাকাত সন্দেহে চারজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সারাদেশে গণপিটুুনিতে নয়জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে গণপিটুুনিতে নিহত হয়েছেন ৫১ জন। ২০২২ সালে ৩৬ জন। ২০২১ সালে ২৮ জন। ২০২০ সালে সারাদেশে গণপিটুনিতে নিহত হন ৩৫ জন, ২০১৯ সালে ৬৫ জন। ওই বছর পদ্মা সেতুতে শিশুর রক্ত লাগবে, মানুষের মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। সেখান থেকেই ছেলেধরা গুজব তৈরি হয়। এরপর গত কয়েক বছরে এই ধরনের গুজব তৈরি না হলেও গণপিটুনি বন্ধ হয়নি। সাড়ে চার বছরেও বিচার হয়নি রেনু হত্যার। এই ঘটনায় ১৫ জন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিন পেয়েছে। গণপিটুনির ঘটনায় বিচার খুব কমই হয়। এই ধরনের মামলায় শত শত আসামি হওয়ায় পুলিশও কোনো দায়িত্ব নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। গণপিটুনি কয়েক কারণে ঘটে। প্রথমত, মানুষ যখন বিচার পায় না, অপরাধের প্রতিকার পায় না তখন আইন হাতে তুলে নেয়। এরপর গোষ্ঠীগত স্বার্থে গুজব বা অপপ্রচারের মাধ্যমে গণপিটুনি হয়। আর কিছু লোক ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য গণপিটুনিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে তিনটি বিষয় দরকার, মানুষ যেন অপরাধের বিচার পায়। অপরাধী যাতে পার পেয়ে না যায়। তাহলে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে না। আবার গণপিটুনিতে হত্যার মতো অপরাধ হলে তারও যেন বিচার হয়। এর বাইরে গুজব, অপপ্রচার এটা বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের একজন অধ্যাপকের মতে, আমাদের এখানকার মানুষের মধ্যে মব সাইকোলজি আছে। তারা কারুর ছোটখাটো অপরাধে দলবদ্ধ হয়ে তাকে নির্যাতন বা গণপিটুনি দেয়। এর কারণ হতে পারে ওইসব অপরাধ বেড়ে যাওয়া, পুলিশি কোনো ব্যবস্থা না নেয়া। তবে সংঘবদ্ধভাবেও এই গণপিটুনি হয় পরিকল্পনা করে, গুজব ছড়িয়ে। আবার গ্রামের মোড়লরা সালিশ করেও এই ঘটনা ঘটান। তখন সেটা হয় নির্মম ও ভয়ংকর।

আমরা মনে করি, গণপিটুনি বন্ধে মানুষকে সচেতন ও মানবিক করে তুলতে হবে। আর কোনো অপরাধের সময় পুলিশ ঠিক সময়ে সক্রিয় হলেও তা কাজে দেয়। তবে এত মানুষের দেশে সেটা কতটা সম্ভব সেটাই ভাবার বিষয়। গণপিটুনি বেড়ে যাওয়া খারাপ লক্ষণ। এতে বোঝা যায় মানুষ পুলিশ ও বিচারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। আবার মানুষ মানুষের প্রতি অমানবিক হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে