রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভারতের লোকসভা নির্বাচন

মোদি সরকার কিছু উলেস্নখযোগ্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য অর্জনগুলো হলো দ্রম্নতগতিতে নতুন বিমানবন্দর, বন্দর মহাসড়কসহ অত্যধিক প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। সুবিন্যস্ত পদ্ধতি, দ্রম্নত অনুমোদন এবং বেসরকারি ঠিকাদারদের ওপর ব্যাপক নির্ভরতার মাধ্যমে এসব অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের তেজিভাব ভারতের অনেক অংশের চেহারা বদলে দিয়েছে এবং নতুন বৃহৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক হিসেবে অনেক আগেই প্রতিষ্ঠা পাওয়া ভারতীয় রেলওয়ের আধুনিকীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। সরকার কোটি কোটি ভারতীয় দরিদ্র মানুষের জন্য তৈরি করা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকেও শক্তিশালী করেছে।
হীরেন পন্ডিত
  ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০
ভারতের লোকসভা নির্বাচন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন একজন মানুষ যিনি আধুনিক সন্যাসী, ধর্ম-কর্ম করেন নিয়মিত আবার তার জীবন ও রাজনীতির মিলে একাকার। অনেকে নরেন্দ্র মোদিকে পূর্ণতাবাদী মনে করেন। পূর্ণতাবাদী হলো তারা, যারা কিছুটা ভাববাদও বিশ্বাস করেন, আবারো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বস্তুবাদকেও মানেন। দর্শনের ভাষায় যাকে বলে পূর্ণতাবাদ। পূর্ণতাবাদ বা কল্যাণবাদ অনুসারে পূর্ণতা লাভ বা আত্মোপলব্ধিই মানবজীবনের পরম কল্যাণ। অর্থাৎ পূর্ণতা লাভ বা আত্মোপলব্ধিই নৈতিক মানদন্ড। পেস্নটো মনে করেন বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার দ্বারা কামনা-বাসনা জাতীয় প্রবৃত্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমেই মানুষের পূর্ণতা বা কল্যাণ আসে। এরিস্টটল মনে করেন, সদগুণ অনুযায়ী মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই মানুষের পূর্ণতা বা কল্যাণ আসে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটু ভাববাদ আর একটু বস্তুবাদ নিয়ে অনেকটা ওরস্যালাইনের মতো বানিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আবার অনেকের মতে নরেন্দ্র মোদি আধুনিকায়নবাদে বিশ্বাসী। তিনি অতীতকেও মেনে নিতে কার্পণ্য করেন না, একজন চা বিক্রেতা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি একাধারে ডিজিটাল পেমেন্ট, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পাশাপাশি কোনো এক হিন্দু দেবতার পুনর্জাগরণের আচারে অংশ নেওয়ার কথাও গর্ব করে বলেন। সেলিব্রেটিদের মতো নরেন্দ্র মোদি তার নিজের ব্র্যান্ডিং করেন টি-শার্ট পরে, ক্যাপ পরে। সাধারণ ভারতীয়দের নজর কাড়তে সৈকত থেকে ময়লা কুড়ান কিংবা রাস্তাও ঝাড়ু দেন। শক্তিধর নেতাদের মধ্যে মোদি ব্যতিক্রম। জো বাইডেন এবং ভস্নাদিমির পুতিন- দু'জনেরই প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। দু'জনের সঙ্গেই আছে উষ্ণ সম্পর্ক।

মোদির প্রচারণার স্স্নোগানে অবশ্য যতই অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির আহ্বান থাকুক না কেন, অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু দল মনে করে তারা ভারতীয় জনতা পার্টির কাছ থেকে অবহেলাই কুড়াচ্ছে। মোদির সঙ্গে ভারতের গণমাধ্যমের যে বিতর্কিত সম্পর্ক দেখা যায়, সেটার আংশিক কারণও এই দ্বন্দ্ব। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠক হিসেবে বছরের পর বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করেছেন। ভারতের ৮০৬টি প্রশাসনিক জেলার প্রায় ৮০ ভাগ জেলার প্রতিটিতে অন্তত এক রাত করে কাটিয়েছেন মোদি।

ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী হন অনেকেই। এশিয়ার অর্থনৈতিক বিস্ময়গুলো তখনই ঘটেছিল যখন কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছিল। জাপান এই পর্যায়ে আসে ১৯৬৪ সালে, চীন আসে ১৯৯৪ সালে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের জন্য ওই অবস্থাটি ২০৩০ সালের আগে আসবে না। এরপর এটি স্থায়ী হবে কমপক্ষে ২৫ বছর এমন আশাই করছেন অনেকে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশের চোহারা পাল্টে দিয়েছেন গত ১৫ বছরে তেমনি গত এক দশকে মোদি ভারতের অবকাঠামো, রাস্তা, সেতু, বন্দর, বিমানবন্দর এবং ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলোয় বিস্ময়কর পরিবর্তন এনেছেন। অনেক দিক দিয়েই বিশ্বসেরার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মোদির ভারত। শিগগিরই চীন ও ব্রিটেনের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্ক হবে ভারতে। এখানকার ৩০ কোটি মানুষ এখন তাৎক্ষণিক অর্থ লেনদেন সিস্টেমের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে।

মোদির আমলে ভারতের উৎপাদনক্ষমতাও বেড়েছে। বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে, পরবর্তী অর্ধশতাব্দীতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অবকাঠামো বিনিয়োগের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০৭৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দ্বিগুণ, চীনের তিন গুণ হলেও ভারতের ১৫ গুণ বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। চীনের চেয়ে ভিন্ন পথে চলার জন্য সারা বিশ্বের এখন ভারতকেই দরকার। বলতে গেলে এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ভারতের ওপর নির্ভর করছে বলেই অনেকে মনে করেন।

মোদি এখন ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসনে দেখতে চান। ভারত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে থেকে কোয়াডেও যোগ দিয়েছে। যেখানে সঙ্গী হিসেবে আছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। আর এ জোটের পরোক্ষ উদ্দেশ্যটি হলো ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা। মোদি সরকারের আরেক ফ্রন্টলাইন আছে অর্থনীতিতে। ভারতের সরকারি তথ্য দেখায় দেশটির বেকারত্ব মাত্র ৪ শতাংশের নিচে। নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিভিন্ন জরিপ বলছে মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন। ১৯৬২ সাল থেকে কোনো ভারতীয় নেতাই এমনটা করে দেখাতে পারেননি।

গত ১৯ এপ্রিল ভারতে শুরু হয়েছে সাধারণ নির্বাচন। প্রায় ৯৭ কোটি নিবন্ধিত ভোটার ৪৪ দিনব্যাপী এ নির্বাচনে ৫৫ লাখ ইভিএমে ভোটাধিকার প্রয়াগ করবেন। লোকসভার জন্য ৫৪৩ জন সদস্য নির্বাচন করবেন। সরকার গঠনে যে কোনো দল বা জোটকে ২৭২ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়।

ভারত এখন বিশ্বের একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি। ভারতের মতো বিশ্বের কোনো দেশে এত বেশি ভোটার নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেমন ভারতের প্রচুর আগ্রহ থাকে, একই রকমভাবে ভারতের নির্বাচন নিয়েও বাংলাদেশের আগ্রহ আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যেমন আছে বড় ধরনের বাণিজ্য স্বার্থ, তেমন আছে রাজনৈতিক তথা নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ। বাংলাদেশ ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়াও উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানি করে। দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের রূপরেখা বহুমাত্রিক। বাংলাদেশের বন্দর, রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথ ব্যবহার করে ভারত তাদের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সহজে ও কম খরচে যোগাযোগ রাখতে পারে, তাদের পণ্য পরিবহণ করতে পারে।

ভারতে একটি স্থিতিশীল সরকার থাকলে তা তার প্রতিবেশীদের জন্যও নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আছে আর্থসামাজিক আর নিরাপত্তার বহুমাত্রিক কারণও। বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার থাকলে লাভ বেশি ভারতের। কারণ তার জাতীয় নিরাপত্তা। জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে মূল্যবান যে কিছু হতে পারে না তা ভারতের চেয়ে এ অঞ্চলে অন্য কোনো দেশ বেশি বুঝতে পারবে না। বাংলাদেশ শুধু ভারতের প্রতিবেশীই নয়, তার কৌশলগত মিত্রও। ভারতের চলমান নির্বাচনে তাদের দেশের মানুষ প্রতিনিধি বাছাই করবে তারাই সরকার গঠন করবেন।

ভারত তার সব প্রতিবেশীকেই কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা অব্যাহত রাখছে। চীনের মতো বিশাল অংকের না হলেও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টাও অব্যাহত রাখছে নতুন করে সেই পথেই যাবে নতুন সরকার তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রধানমন্ত্রী মোদি হিন্দি বলয়ের আটটি রাজ্যে প্রচারে গিয়ে বলছেন, তাদের কর্মসূচি অনুযায়ী রামমন্দির তৈরি হয়ে গেছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে মোদির গত ১০ বছর রাজত্বের সমালোচনাও রয়েছে, তারা বলছেন কোথায় কতদূর এগোল, নানা দিক থেকে এ প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ প্রায়। আসন্ন নির্বাচনের আগে হিসাবের খাতাতে একটি বিষয় উজ্জ্বল পররাষ্ট্রনীতি যেভাবে ভারতের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে এর আগে কখনো এ রকম হয়নি এবং সেই পরিবর্তন ভালোর দিকে, শক্তির দিকে। আসলে মূল উদ্দেশ্য দুই শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকা ও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কূটকৌশল।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর সঙ্গে জোটবদ্ধ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এই নির্বাচনে পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে যাচ্ছে, এই মর্মে একটি সাধারণ ধারণা ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিজেপি আশা করছে, ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় জোটবদ্ধভাবে তারা এবার ৪০০-এর বেশি আসনে জয়লাভ করবে, এটা তাদের বিশ্বাস।

কার্যত কয়েক দিন ধরেই গোটা ভারতে দফায় দফায় মহারণ হয়েছে। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্ব জুন মাসের ৪ তারিখে জানতে পারবে কে হলেন তাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, সেটা জানার অধিকার সবাইর রয়েছে, এমনই দাবি করেছিলেন দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অবশ্য নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি দেখানো নিয়ে তথ্য কমিশনের নির্দেশ খারিজ করে দেয় গুজরাট হাইকোর্ট। অনেকে বলেন ২০১৪ সালে তো মোদি দেশের জনগণের ভোটে জিতে এসেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়ে নয়। এটা তার ক্যারিশমা। মোদির একটা ব্যক্তিত্ব রয়েছে, সেই সাহায্যেই বিপুল জয় পেয়েছেন।

একটি জোরালো প্রচারণার পর যাতে মোদি নিজেকে একজন বাস্তববাদী প্রার্থী হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন যিনি ভারতের নিম্ন-কার্যকারিতা অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, তিনি এবং দল বিজয়ী হয়েছিল, বিজেপি চেম্বারে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতেছিল। মোদি ২৬ মে, ২০১৪-এ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তার সরকার ভারতের পরিবহণ পরিকাঠামোর উন্নতি এবং দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নিয়ম উদারীকরণের প্রচারাভিযানসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার শুরু করেন। মোদি তার মেয়াদের প্রথম দিকে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছিলেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের আয়োজন করেন। আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো চীনা নেতা ভারতে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি হিন্দু সংস্কৃতির প্রচার এবং অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের তদারকি করেছিলেন। অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো ব্যাপক ছিল, কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো প্রবর্তন করেছিল এবং অস্থায়ী বাধাগুলো- যা দেশব্যাপী অনুভূত হতে পারে। সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশের মাধ্যমে ৫০০ এবং ১,০০০ টাকার নোটের বিমুদ্রীকরণ এবং প্রতিস্থাপন। উদ্দেশ্য ছিল কালো টাকা বন্ধ করার অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহৃত নগদ বড় অংকের নগদ বিনিময় করা কঠিন করে তোলা। পরের বছর সরকার পণ্য ও পরিষেবা কর প্রবর্তনের মাধ্যমে ভোগ কর ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত করে, নরেন্দ্র মোদি আরও শক্তিশালী ও একচ্ছত্র হয়ে ফিরেছেন এমনটাই আলোচনা আছে বাজারে। বিজেপি বা এনডিএ নয়, জিতেছেন আসলে মোদি। দেশের একচ্ছত্র নেতা হওয়ার আগে দলেও সেটি নিশ্চিত করেছেন। জনগণের ধারণা ১০০ বছর পর ভারতের স্বাধীনতার প্রথম ৭৫ বছরে তিনজন প্রধানমন্ত্রীর নাম মানুষ মনে রাখবেন পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি।

মোদি সরকার কিছু উলেস্নখযোগ্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য অর্জনগুলো হলো দ্রম্নতগতিতে নতুন বিমানবন্দর, বন্দর মহাসড়কসহ অত্যধিক প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। সুবিন্যস্ত পদ্ধতি, দ্রম্নত অনুমোদন এবং বেসরকারি ঠিকাদারদের ওপর ব্যাপক নির্ভরতার মাধ্যমে এসব অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের তেজিভাব ভারতের অনেক অংশের চেহারা বদলে দিয়েছে এবং নতুন বৃহৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক হিসেবে অনেক আগেই প্রতিষ্ঠা পাওয়া ভারতীয় রেলওয়ের আধুনিকীকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। সরকার কোটি কোটি ভারতীয় দরিদ্র মানুষের জন্য তৈরি করা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকেও শক্তিশালী করেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী আশাবাদী ভারতকে বিশ্বের নেতৃত্বের দিকে ধাবিত করবেন। প্রতিদিন দেশে হওয়া উন্নয়ন কাজ তাকে এই শক্তি জোগাচ্ছে। তবে মোদির দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে রাহুল গান্ধীকে পর্যন্ত গ্রেফতার বরণ করতে হয়েছে এবং বাক্‌ ও সংবাদপত্ররে স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বলে মনে করছেন সচেতন মানুষজন। গ্রেপ্তার হয়েছেন দিলস্নীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার দল আম আদমি পার্টির অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরও অনেক নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে।

চন্দ্র অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার সাফল্যের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে তালিকায় নাম লিখিয়েছে ভারত। চাঁদের মাটি স্পর্শ করা ঐতিহাসিক মুহূর্তটি উদ্‌যাপন করতে উৎসুক ভারতীয় জনতা সমবেত হয়েছিল। ইসরোর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পুরো ঘটনা সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে যারাই সরকার গঠন করুক তারা বাংলাদশেরে সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আরও মনোযোগ বাড়াবে এটাই প্রত্যাশা। গণতান্ত্রিক ভারত তার উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে পারবে।

ভারতকে ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র কোন চোখে দেখছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রুখতে ভারতই তাদের কাছে বড় বাজি। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-জাপান-ভিয়েতনাম অক্ষ চীনের কাছেও চিন্তার বিষয়। দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভিয়েতনামের সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের তেল-সন্ধানকে চীন মোটেই ভালোভাবে না নিলেও বিশেষ কিছু করতে পারছে না। এর একটা কারণ, ভারত ১২০ কোটি মানুষের বাজার, অন্য কারণ ভারতের সফল কূটনীতি।

হীরেন পন্ডিত : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে