বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আরও রোহিঙ্গা ঢোকার শঙ্কা কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

  ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
আরও রোহিঙ্গা ঢোকার শঙ্কা কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে। সেই সংঘাত থেকে বাঁচতে আরও অনেক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামলে তা বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরের শেষের দিক থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতিগত সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র লড়াই চলছে। এরই মধ্যে রাখাইনের নয়টি প্রধান শহর দখল করেছে বিদ্রোহীগোষ্ঠীটি। আরও এলাকা দখলের জন্য আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বিদ্রোহীদের এমন সমন্বিত আক্রমণে জান্তা সরকার ২০২১ সালে অভু্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।

যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে যে আশ্বাস পেয়েছিল, তার ফলাফল শূন্যই বলা চলে। কারণ প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা সফল হয়নি। সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। এই না যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, মিয়ানমারের শাসকদের ওপর চরম আস্থাহীনতা। তারা যেভাবে নিজ বাসভূম থেকে নিগৃহীত, বিতাড়িত ও নির্যাতিত হয়েছে- তা ভাবলেও তাদের গা শিউরে ওঠে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, তাদের নিরাপত্তা, নিজের সম্পত্তির মালিক হয়ে বাসভূমিতে ফিরে যাওয়া এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়নি বলেই আস্থার অভাবে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরত যেতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশ তাদের ভাষানটেকে পুনর্বাসন করেও লাভ হচ্ছে না। তারা নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশকজন খুনও হয়েছে।

1

এটা সত্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর অত্যাচারের মুখে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিলেও সেই রোহিঙ্গাদের কারণেই চরম সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে, উদ্বেগও বেড়েছে। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে 'বিশ্ব মানবতার বিবেক' হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গারা এখন আমাদের গলার কাঁটা, বিষফোঁড়া। শেখ হাসিনার মানবতাকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক নয়। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এই নীতিতে তিনি বিশ্বাসী। আর এই কারণেই তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এখন আরও রোহিঙ্গা ঢোকার শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। তাদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও জাতিসংঘের উচিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে