বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

শ্রমিক অসন্তোষ কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

  ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শ্রমিক অসন্তোষ কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির খবর সামনে এসেছে- যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রমিক অসন্তোষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যেখানে উৎপাদন কমে যাওয়া, আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, তৈরি পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। ফলে এই খাতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কতটা উৎকণ্ঠার বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কচুক্ষেত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আমরা বলতে চাই, যৌক্তিক দাবির বিষয়টি যেমন সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে, তেমনিভাবে কেউ যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চেষ্টা করে কিংবা জ্বালাও পোড়াও করবে এটাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে এবারের ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। উলেস্নখ্য, এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন- বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কচুক্ষেত এলাকার ডায়নাসহ কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেন। তারা মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে সেনানিবাসমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। তাদেরকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে বেলা পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি ট্রাক এবং সেনাবাহিনীর একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার বলেছেন, কয়েকটি গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তারা রাস্তায় নেমে আসে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে। এই অবস্থায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও শক্তি প্রয়োগ করে।

আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক খাতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তাতে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল বিজিএমইএ। ফলে এই বিষয়গুলো যেমন উদ্বেগের, তেমনি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ যে জ্বালাও পোড়াও পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তাও গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করা। মনে রাখা দরকার, পোশাক খাতের অস্থিরতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এটা স্মর্তব্য যে, তৈরি পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। ফলে, এই খাতে যে কোনো ধরনের আনকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা দ্রম্নত নিরসন করার বিকল্প নেই। এর আগে শিল্প খাতের অস্থিরতা নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ফলে, যে কোনো সংকট তৈরি হলে তার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে সেই মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, কোনোভাবেই শিল্প খাতে অস্থিরতা তৈরি হোক তা গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিক অসন্তোষ উৎপাদন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে, রপ্তানি কমে যাওয়া, ক্রেতা হ্রাস পাওয়াসহ নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পোশাক খাতের ক্ষতি হতে থাকলে সেটি উৎকণ্ঠার। সঙ্গত কারণেই এবারে যে ঘটনা ঘটল তা আমলে নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে, একইসঙ্গে বলা দরকার, অস্থিতিশীলতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিতে, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পোশাক খাতের স্বাভাবিকতা জরুরি। সঙ্গত কারণেই পোশাকখাতের স্বাভাবিকতা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে