চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের তীব্র লড়াই আর ব্যাপক রাজনৈতিক মেরুকরণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা শেষ পর্যন্ত 'আমেরিকা প্রথম' নীতিতে আস্থাশীল ট্রাম্পকেই বেছে নিয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানাই অভিনন্দন। একইসঙ্গে দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া এবং বিশ্বে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এমন প্রত্যাশা করি।

তথ্য মতে, সর্বশেষ সুইং স্টেট উইসকনসিনে জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজ্যটিতে ১০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এ জয়ের ফলে ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান তিনি। এছাড়া, মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। সামান্য ব্যবধানে এতদিন তারা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল। কিন্তু মঙ্গলবারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সিনেট এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও ভোট হয়। এতে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫১ আসন নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকানরা। অন্যদিকে, প্রতিনিধি পরিষদেও তারা এগিয়ে। লক্ষণীয় যে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্প অর্থনীতি, অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন- যা মূলত তার সমর্থকদের আরও উজ্জীবিত করেছে। এছাড়া, এটা বিশেষভাবে উলেস্নখ্য যে, মার্কিন অর্থনীতির নিম্নগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ইসু্যগুলোতে ট্রাম্পের অবস্থান অনেক ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে জানা যায়। অন্যদিকে, ইউক্রেনের মতো বাইরের দেশের জন্য বড় অংকের অর্থ ব্যয় নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়। এ বিষয়ে ট্রাম্পের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজ দেশের অগ্রাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রম্নতিও অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। মূলত সুইং স্টেটগুলোর জয়ই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে বলে জানা গেছে। এটাও আলোচনায় আসছে যে, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জয় দেখিয়ে দেয় যে, অনেক আমেরিকান ভোটার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

আমরা বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প- স্বাভাবিকভাবেই দেশটির জনসাধারণের তার কাছে যে প্রত্যাশা সেগুলো পূরণে তাকে আন্তরিক এবং দৃঢ় হতে হবে। বিশেষ করে, মার্কিন অর্থনীতির নিম্নগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ইসু্যগুলোতে ট্রাম্পের অবস্থান এবং জন আকাঙ্ক্ষা পূরণে তিনি উদ্যোগী হবে এমনটি প্রত্যাশিত। অন্যদিকে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্ব সংঘাত মুক্ত নয়। যুদ্ধ এবং যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মৃতু্যর বিভীষিকা, ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই। ফলে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জোড়ালো ভূমিকা রাখবেন এমনটি আমরা প্রত্যাশা করি।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, এবারের নির্বাচনের একটি উলেস্নখযোগ্য বিষয় হলো, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক জরিপে ট্রাম্পের পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে আসে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফলাফল ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। জরিপগুলোর অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হ্যারিসের পক্ষে ইঙ্গিত দিলেও ট্রাম্পের সমর্থকরা শেষ মুহূর্তে বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন। বলা দরকার, এবারের নির্বাচনী জয়ের মাধ্যমে ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর-বাইরের বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত হচ্ছেন। লক্ষণীয় যে, এই জয়ে ট্রাম্পের সমালোচকরা যেমন আমেরিকার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তেমনি তার সমর্থকরা আশা করছেন যে, এই মেয়াদে ট্রাম্প তাদের দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নে নিরলস থাকবেন।

রাষ্ট্র উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

সর্বোপরি আমরা উলেস্নখ করতে চাই, বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প একাধিক ভিন্নমতকে উপেক্ষা করে তার নিজের বলয়ে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করবেন। তবে এটি শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বৈশ্বিক রাজনৈতিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে, যেখানে ট্রাম্প একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সংকটে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে পদক্ষেপ নিতে পারেন। আমরা মনে করি, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নানা সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এর পাশাপাশি বিশ্বকে সংঘাত মুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জোড়ালো ভূমিকা রাখবেন এমনটি প্রত্যাশিত।