ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এটাও আলোচনায় আসে- মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা রয়েছে দেশে। আর এ ধরনের ভূমিকম্পে সুনামির কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইন দেশের মধ্যে রয়েছে- যা একটি বড় ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এছাড়া এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে প্রায়ই ভূমিকম্প হচ্ছে। সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে ওঠে দেশের বিভিন্ন এলাকা। এ ঘটনার এক মাসের ব্যবধানে শুক্রবার সকালে ফের কেঁপে ওঠে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৫ মাত্রার। সকাল দশটা ৩২ মিনিটে মাঝারি মাত্রার ওই কম্পন রেকর্ড করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস'র তথ্য অনুযায়ী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মিয়ানমারে। এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবরে ৫.৪ মাত্রার, ১৭ সেপ্টেম্বর নরসিংদী অঞ্চলে ৪ মাত্রার ও ১৪ আগস্ট সিলেট লাগোয়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এসব ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা।
আমরা মনে করি, ভূমিকম্পের ঝুঁকির যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। এ কথাও স্মর্তব্য, বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অভ্যন্তর এবং প্রধান শহরগুলোর আশপাশে ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো নির্দেশ করে যে সাধারণভাবে দেশের জন্য এবং বিশেষ করে শহরগুলোর জন্য ভূমিকম্পের বিশেষ ঝুঁকি বিদ্যমান। কাঠামোগত নকশা, শহর পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকম্প শক্তির বিবেচনা। তাই ভবিষ্যতের দুর্যোগ প্রশমনের জন্য একটি পূর্বশর্ত। এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল রাজধানী শহর ঢাকা ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ এজন্য দায়ী।
আমরা মনে করি, ভূমিকম্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, কোথায় সাহায্যের জন্য ফোন করতে হবে ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, টকশোতে প্রচার করা উচিত। জাতীয় বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির যথাযথ প্রয়োগ বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসারে উত্তরে তিব্বত সাব- পেস্নট, ইন্ডিয়ান পেস্নট এবং দক্ষিণে বার্মিজ সাব- পেস্নটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে আছে দেশ। উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে মনে করছেন তারা। ভূমিকম্পে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোনা ও দিনাজপুর অঞ্চলই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই।
এটা মনে রাখা জরুরি, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের না আছে সচেতনতা, না আছে প্রস্তুতি। তাই এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। মাঝারি ও বড় ভূমিকম্প হলে দেশ বহুগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মূল কারণ, আমাদের ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে উঁচু ভবন বানানোর ঝোঁক বাড়ছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করার মূল অস্ত্র হচ্ছে বিল্ডিং কোড মেনে চলা। কিন্তু কেবল বিল্ডিং কোড থাকলেই হবে না, প্রয়োজন এর সফল ও সঠিক প্রয়োগ। ভূতত্ত্ববিদ ও সিসমোলজিস্টদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে যেকোনো সময় মাঝারি কিংবা বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। এ জন্য আমাদের কাঠামোগত এবং অকাঠামোগত প্রস্তুতি এখনই বাড়ানো দরকার। এ ধরনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ভূমিকম্প দুর্যোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। যেকোনো সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে। সুতরাং দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং এর বিকল্প নেই।