শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের একজন ভূগোলবিদ এবং ক্যালকাটা জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি'র প্রতিষ্ঠাতা। যা বর্তমানে জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিত। তাকে ভারতীয় ভূগোলের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৬৪-৬৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনিই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালয়ের নামকরণ করেছিলেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করে। অধ্যাপক শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রম্নয়ারি শান্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শান্তিপুরেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম শিক্ষাগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি পড়াশোনায় তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। পরবর্তী সময়ে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে স্নাতক এর পর স্নাতকোত্তরের জন্য বেনাসর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ভূতত্ত্বে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করার পর পরবর্তী উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে যান। প্যারিসের সোরবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউনিভার্সিটি দে প্যারিস) বিখ্যাত ভূগোলবিদ ইমানুয়েল ডি. মর্তোনে এবং পল ভিদাল দে লা বস্নাচ-এর অধীনে অসমের দুটি জেলা- গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের উপত্যকার ভূবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করে প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ডি.লিট. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি তার গবেষণাগ্রন্থ- লে পস্নাটু দে মেঘালায়া-এ মেঘপুঞ্জের পাহাড়ি এলাকাটিকে নাম দিয়েছিলেন- মেঘালয়। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ডক্টর চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও ভূগোল বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ গমন করেন। পরবর্তী সময়ে ভারতে ফিরে আসার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদান করেন এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগে ভূগোল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৩৯ এবং ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি কোর্সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগের সূচনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভূগোল বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি আজীবন এই বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণের পরেও সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি ৮৬ বয়সে মৃতু্যবরণ করেন।