শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

মাছ উৎপাদনে সাফল্য

দেশের জন্য ইতিবাচক
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
মাছ উৎপাদনে সাফল্য

বলা হয়ে থাকে মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালির খাদ্য তালিকায় নানা ধরনের মাছ থাকে। বিশেষ করে অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মাছ। ফলে খাদ্য তালিকায় মাছের জুড়ি মেলা ভার। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, মৎস্যসম্পদ (মাছ, আবরণযুক্ত জলজপ্রাণী ও শামুক) উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (ইইইউ) ওয়ার্ল্ড ইন ফিগার নামের একটি হালনাগাদ প্রকাশনায় এই তথ্য দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের তথ্যে বাংলাদেশ এ অবস্থান অর্জন করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

উলেস্নখ্য, আলোচিত সময়ে মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটি মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৬২.২ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ২২ লাখ টন। দ্বিতীয় ইন্দোনেশিয়া, দেশটির উৎপাদন ১ কোটি ২৮ লাখ টন। তৃতীয় অবস্থানে ভারতের উৎপাদন ১ কোটি ১৬ লাখ টন। এরপর রয়েছে ভিয়েতনাম ৭১ লাখ টন, যুক্তরাষ্ট্র ৫৫ লাখ টন, রাশিয়া ৫১ লাখ টন ও পেরু ৪৩ লাখ টন। অষ্টম স্থানে থাকা বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ ৪১ লাখ টন। নবমে থাকা জাপান ৩৮ লাখ টন এবং নরওয়ে উৎপাদন করেছে ৩৭ লাখ টন মৎস্যসম্পদ। এ ছাড়া ১১ থেকে ২০তম স্থানে থাকা দেশগুলো হলো মিয়ানমার, চিলি, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, মালয়েশিয়া, মরক্কো ও ব্রাজিল।

পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাবে, বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্যসম্পদের অবদান এখন ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ ছাড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে দেশে ২০১৭ সালে ১০ লাখ ৪৮ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ইলিশ প্রায় ৫ লাখ টন। জাটকা নিধন বন্ধসহ সরকারের নানা উদ্যোগে ইলিশের নতুন নতুন অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। তবে বাজারে ইলিশের প্রচুর সরবরাহ থাকলেও দাম কমেনি। আশার কথা, প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম থেকে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ সাফল্য লাভ করলেও বাজারে মাছের লাগাম ছাড়া দাম। স্বাভাবিক নিয়মে মাছের উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কমার কথা। অথচ বাজারে উল্টো চিত্রই চোখে পড়ে। নদী জলাশয়ে খালে বিলে প্রাকৃতিক মাছ কমে যাওয়ায় এখন অধিকমাত্রায় মাছের চাষ হচ্ছে। এর ফলে মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হচ্ছে।

তবে মৎস উৎপাদকের ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাক দিকও রয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে মৎস্য ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় অনেক ঘেরে চিংড়ি মাছ মরে গেছে। এতে কয়েক হাজার চিংড়ি চাষির প্রায় ৩০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। শুধু ফকিরহাট নয়, পানির অক্সিজেন কমে বাগেরহাট সদর, মোলস্নাহাট ও খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ঘেরগুলোতেও চিংড়ি মাছ মারা গেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। অনেকেই আবার পুকুরে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শত্রম্নতাবশত মাছ মেরে ফেলছে। কেউ কেউ মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে পেশিশক্তি বলে। মৎস্য চাষকে উৎসাহিত করার জন্য এ সব প্রতিবন্ধকতাকে আমলে নিতে হবে, রাখতে হবে কঠোর নজরদারিতে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপই কেবল পারে মৎস্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধি লাভ করতে। সে জন্য বর্তমান সাফল্য ধরে রাখতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে