শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর য়
  ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০
অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা
অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

সপ্তম অধ্যায়

১। জনাব মহিউদ্দীন ও জনাব রেহেনা বেগম স্বামী-স্ত্রী। জনাব রেহেনা বেগম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য। অন্যদিকে তার স্বামী জনাব মহিউদ্দীীন একজন উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তা। স্বামী-স্ত্রী এলাকার উন্নয়নে ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন।

ক) সংবিধান কী?

খ) সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি বলা হয় কেন? বুঝিয়ে বলো।

গ) জনাব মহিউদ্দীনের কাজ সরকারের কোন বিভাগকে নির্দেশ করেছে?

ঘ) সরকার পরিচালনায় উদ্দীপকে উলিস্নখিত সরকারের বিভাগগুলোর কাজ যথেষ্ট কী? উত্তরের পক্ষে তোমার যুক্তি দাও।

উত্তর : ক) সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল।

খ) সরকার ছাড়া একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না।

রাষ্ট্রের অপরিহার্য চারটি মৌলিক উপাদানের মধ্যে একটি হচ্ছে সরকার। এটি রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। ইঞ্জিন ছাড়া যেমন গাড়ি চলতে পারে না ঠিক তেমনি সরকার ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না।

গ) জনাব মহিউদ্দীনের কাজ সরকারের শাসন বিভাগকে নির্দেশ করেছে। শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের শাসনকাজে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বোঝায়। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রিপরিষদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়েই শাসন বিভাগ গঠিত। শাসন বিভাগ আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করে এবং সে অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করে। সেই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে এবং বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। উদ্দীপকে জনাব মহিউদ্দীন একজন উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তা। যেহেতু রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাই শাসন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত তাই তার কাজ সরকারের শাসন বিভাগকে ইঙ্গিত করে। আইন বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব সরকারের শাসন বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকে।

ঘ) জনাব মহিউদ্দীন ও জনাব রেহেনা বেগমের কাজ যথাক্রমে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগকে নির্দেশ করে। তবে তাদের সম্পাদিত কাজের মধ্যমে রাষ্ট্রের পরিচালনা সম্ভব নয়। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকারের জন্য বিচার বিভাগের প্রয়োজন আছে। সরকার রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ সম্পাদন হয়। আর এ কাজগুলো সম্পাদনের জন্য সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের আইনসভা হলো জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদ রাষ্ট্রের আইন তৈরি করে ও পরিবর্তন করে, দেশের জনমত প্রকাশ করে। সরকারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে, সংবিধান প্রণয়ন ও সংশোধন করে। শাসন বিভাগ আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। অন্যদিকে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে দেশের বিচার কাজ পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা মোকদ্দমার মীমাংসামূলক রায় দেয়। সেই সঙ্গে দেশের সংবিধান ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করে। উদ্দীপকে জনাব মহিউদ্দীন একজন উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তা এবং জনাব রেহেনা বেগম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য। তারা যথাক্রমে সরকারের শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। এই দুই বিভাগ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অত্যন্ত জরুরি হলেও বিচার বিভাগের সহায়তা ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না। উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। কোনো একটি বিভাগকে বাদ দিলে অন্য বিভাগগুলোর কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না।

২। জনাব লিপন সাহেব স্থানীয় সরকারের এমন একজন জনপ্রতিনিধি। যিনি পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়ে তিনি আবাসিক হোস্টেল তৈরি ও নৈশ বিদ্যালয় পরিচালনাসহ বেশ কিছু কাজ করেন। অন্যদিকে জনাব ফারুক হোসেন সাহেব শহরাঞ্চলের স্থানীয় সরকার কাঠামোর একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। বর্তমানে দেশে তার পরিষদের সংখ্যা ৩২৭টি।

ক) সুশাসন কী?

খ) স্থানীয় সরকার বলতে কী বোঝায়?

গ) উদ্দীপকে উলিস্নখিত লিপন সাহেব স্থানীয় সরকার কোনটি? ব্যাখ্যা করো। ঘ) স্থানীয় সরকার কাঠামোর সদস্য হিসেবে জনাব ফারুক সাহেবের কার্যাবলি মূল্যায়ন করো।

উত্তর :

ক) সুশাসন বলতে অংশগ্রহণশূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়।

খ) স্থানীয় পর্যায়ে শাসন ও উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই হলো স্থানীয় সরকার। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ সম্পাদন হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার সকল কাজ সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

গ) উদ্দীপকে উলিস্নখিত লিপন সাহেব স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা হলো জেলা পরিষদ। কয়েকটি উপজেলা নিয়ে একটি জেলা পরিষদ গঠিত হয়। একজন চেয়ারম্যান এবং বিশজন সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সকলে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। জেলার অন্তর্ভুক্ত সংসদ সদস্যরা হবেন জেলা পরিষদের উপদেষ্টা। জেলা পরিষদ জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করে। উপজেলা ও পৌরসভার সংরক্ষিত এলাকার বাইরে রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, আবাসিক হোস্টেল তৈরি, নৈশ বিদ্যালয় পরিচালনা, কৃষি খামার স্থাপন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ ও পানি সেচের ব্যবস্থা করাসহ বেশকিছু কাজ করেন। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণের কাজ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করে। জনাব লিপন সাহেব নির্বাচিত হওয়ার প্রক্রিয়া ও উন্নয়ন কাজ জেলা পরিষদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উলিস্নখিত স্থানীয় সরকার হলো জেলা পরিষদ।

ঘ) জনাব ফারুক হোসেন সাহেব পৌরসভার একজন নির্বাচিত সদস্য। পৌরসভার সদস্য হিসেবে তাকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। পৌরসভার বিভিন্ন কাজের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো-বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্যকর ও ভেজালমুক্ত খাদ্য বিক্রি নিশ্চিত করা, শহরের পরিবেশ রক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা, বিধি মোতাবেক ঘরবাড়ি নির্মাণের ব্যবস্থা করা, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, রাস্তার দুইপাশে গাছ লাগানো, পার্ক ও উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ সংরক্ষণ করা। উদ্দীপকে জনাব ফারুক হোসেন সাহেব পৌরসভার একজন সদস্য। উপরের কার্যক্রম ছাড়াও পৌরসভার মতো তার পরিষদ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা প্রদানের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, এতিম ও দুস্থদের জন্য এতিমখানা পরিচালনা, লাইব্রেরি ও ক্লাব গঠন করা, জন্ম-মৃতু্য ও বিবাহ নিবন্ধন করা, মহামারি ও সংক্রামক ব্যাধি ইত্যাদি কাজ করে। সার্বিক আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, শহরাঞ্চলের স্থানীয় সরকার হিসেবে পৌরসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে