রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

৫. সুমন আট সন্তানের জনক। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি ছোট ঘরে বাস করে। অর্থাভাবে সে তার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে না। সেই সাথে পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয় না। এমনকি তার পরিবারে আনন্দ-উৎসব করার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই।

ক. বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর নাম লেখো।

খ. মৌল মানবিক চাহিদার একটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

গ. সুমনের পরিবারের অবস্থা মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের কোন অবস্থাকে নির্দেশ করে? নিরূপণ করো।

ঘ. সুমনের মতো পরিবারগুলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর :

ক. বাংলাদেশের সমাজে মৌল মানবিক চাহিদাগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন।

খ. মৌল মানবিক চাহিদার একটি তাৎপর্য হলো এগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিকশিত হতে পারে। সমাজে মানুষের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই। কেননা, এ চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমেই কেবল মানুষ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। মানুষের বেঁচে থাকা ও জীবনমানের উন্নয়নে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা ভূমিকা রাখে। এছাড়া, শিক্ষা ও চিত্তবিনোদন তার মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সম্পন্ন করে।

গ. উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের অবস্থা বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের প্রতিবন্ধকতাকে নির্দেশ করে। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ রকম দু'টি কারণ হলো- অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য। কোনো রাষ্ট্রের আয়তন ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আবার দারিদ্র্যও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য প্রতিবন্ধকতা

সৃষ্টি করেছে। সুমন আট সন্তানের জনক অর্থাৎ তার পরিবার অনেক বড়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি

হওয়ার কারণে সুমন সবার জন্য বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি মৌল মানবিক চাহিদা

নিশ্চিত করতে পারছে না। এক্ষেত্রে দারিদ্র্যও অন্যতম অন্তরায়। কারণ সুমনের আর্থিক অবস্থা যদি শক্তিশালী

হতো তাহলে হয়তো আট সন্তান সত্ত্বেও পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারত। আর্থিক সামর্থ্য না থাকা এবং পরিবার বেশি বড় হওয়া এ দুই সমস্যার কারণে সুমন তার পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের অবস্থা বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনসংখ্যাধিক্য দারিদ্র্যকে নির্দেশ করছে।

ঘ. সুমনের মতো পরিবারগুলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। সমাজে মানুষের স্বাভাবিকভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য তার মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অপরিহার্য। কিন্তু দারিদ্র্য, জনসংখ্যাধিক্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রভৃতি কারণে অনেকেই মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না। ফলে পুষ্টিহীনতা, স্বার্থহীনতা, অপরাধপ্রবণতা, নিরক্ষরতার মতো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

উদ্দীপকের সুমনের দশ সদস্যের বিশাল পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় তার পরিবারে পুষ্টিহীনতা ও স্বার্থহীনতার মতো সমস্যা সৃষ্টি হবে। শিক্ষার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তার সন্তানেরা নিরক্ষর বা অজ্ঞ থেকে যাবে। তাছাড়া অভাবের জেরে তার পরিবারের সদস্যরা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হলে যে কোনো পরিবারেই উলিস্নখিত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে পরিবারগুলোতে মারাত্মক পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। পাশাপাশি শিক্ষার সুযোগের অভাবে নিরক্ষরতা দেখা দেয়, যা আবার পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যাধিক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্বসহ নানামুখী সংকট তৈরি করে। এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য অনেক সময় অবৈধ পথ বেছে নেয়। ফলে সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হলে সুমনের মতো পরিবার নানামুখী সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজকে বিশৃঙ্খল ও অস্থিতিশীল করে তোলে।

৬. ভূমিহীন কৃষক রফিক মিয়ার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। অর্থাভাবে তিনি তার পরিবারের ৬ সদস্যের মুখে তিন বেলা খাবার যোগাতে পারে না। পাশাপাশি তিনি তার ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেনি। আবার তিনি তার অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে পারেননি।

ক. মৌলিক চাহিদা কী?

খ. সামাজিক চাহিদা বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়ার পরিবারে কোন কোন চাহিদা পূরণ হচ্ছে না? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত চাহিদাগুলো পূরণের পথে অন্তরায়/বাধাগুলো আলোচনা করো।

উত্তর :

ক. মানুষের বেঁচে থাকা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ হওয়া প্রয়োজন তাই মৌলিক চাহিদা।

খ. সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সামাজিক জীবন যাপনের জন্য যে চাহিদাগুলো পূরণ হওয়া অপরিহার্য সেগুলোকেই সামাজিক চাহিদা বলা হয়। সামাজিক জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলা এবং উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য মানুষের কিছু চাহিদা; যেমন- বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন, নিরাপত্তা প্রভৃতি পূরণ হওয়া জরুরি। মানুষের এই চাহিদাগুলোই সামাজিক চাহিদা। এগুলোকে মানবিক চাহিদাও বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়ার পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। সাধারণত মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন এ চাহিদার অন্তর্গত বিষয়।

উদ্দীপকে রফিক মিয়ার পরিবারে খাবারের অপ্রতুলতা, অভাবের কারণে সন্তানদের স্কুলে না পাঠানো জটিল রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে না পারার বিষয়গুলো চিত্রায়িত হয়েছে। এ বিষয়গুলো মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অনুপস্থিতিকে নির্দেশ করছে। সুতরাং প্রশ্নানুযায়ী বলা যায়, রফিক মিয়ার পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত রফিক মিয়ার মতো পরিবারগুলোর মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পারার একাধিক অন্তরায় লক্ষ্য করা যায়।

বাংলাদেশে সব সমস্যার মূলে রয়েছে অধিক জনসংখ্যা।

বাড়তি জনসংখ্যার কারণে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে এখনো অনেক লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। স্বাভাবিকভাবেই দারিদ্র্যের কারণে তারা নূ্যনতম মৌল চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশে প্রায়ই আঘাত হানে। সেই সাথে বেকার সমস্যা ও নির্ভরশীল জনসংখ্যার হার দেশে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৭০-৮০ ভাগ লোক এখনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল, অথচ তাদের চাষাবাদ পদ্ধতি অনুন্নত। এর ফলে প্রত্যাশিত ফলন না পাওয়ায় মৌল চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের হার অনেক বেশি। ফলে দরিদ্র লোকজন নূ্যনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এছাড়াও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্নআয়ের লোকজনের জীবনযাপন অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। কেননা, দ্রব্যমূল্য বাড়লেও মানুষের আয় আশানুরূপ হারে বাড়ে না। সর্বোপরি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং শহরে লোকসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ার ফলে ভূমিহীন কৃষক রফিকের পরিবারের মতো পরিবারগুলোতে মৌল চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে