মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ১১ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকর্মের শাখা উত্তর : ক. সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মীরা সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের কাজ করে। খ. প্রবীণ সমাজকর্ম বলতে সমাজকর্মের এমন শাখাকে বোঝায় যেটি প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে। বর্তমানে প্রবীণদের বিশেষ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা বিশ্বের সবদেশে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতেই প্রবীণ সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) ব্যাখ্যানুযায়ী, প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের বিশেষ অনুশীলন ক্ষেত্র, যাতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মনো-সামাজিক চিকিৎসা এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ. উদ্দীপকের মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সমাজকর্মের অন্যতম বিশেষায়িত শাখা শিল্প সমাজকর্ম তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে। শিল্প সমাজকর্ম শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে। বিশেষ করে শিল্প প্রতিষ্ঠানে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে শিল্প সমাজকর্ম কাজ করে। উদ্দীপকের সমস্যাটিও শিল্প সমাজকর্মের পরিধির আওতাভুক্ত। উদ্দীপকের বর্ণনা অনুসারে, সাভারের একটি গার্মেন্টসে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের স্বার্থের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিম্নপর্যায়ের কর্মীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সৃষ্ট সংকটাবস্থার অবসান ঘটাতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একজন শিল্প সমাজকর্মী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সংকটের কারণেই সময়ের প্রয়োজনে শিল্প সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে পেশাদার সমাজকর্মের বিশেষায়িত শাখা শিল্প সমাজকর্মের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ হবে। ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব নিরসনে শিল্প সমাজকর্ম পরামর্শ প্রদান ও কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কিছু সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। বিশেষ করে শ্রম আইনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বের সমাধানে শ্রম আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে শিল্প সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকেও শিল্প সমাজকর্মের এরূপ ভূমিকা ফলপ্রসূ হবে। উদ্দীপকের সাভারের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানটিতে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন শিল্প সমাজকর্মীরা এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পেছনে বিদ্যমান কারণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। দ্বন্দ্বের কারণ চিহ্নিত করার পর তারা বিদ্যমান শ্রম আইনের আলোকে এর সমাধান নির্ধারণ করবেন। পরবর্তী ধাপে তারা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির কাজ করবেন। তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার প্রকৃতি ও কারণ তুলে ধরে সমাধানের পথ নির্দেশ করে দেবেন। এক্ষেত্রে মূলত শিল্প সমাজকর্মীরা দল সমাজকর্মের পদ্ধতির আলোকে সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। তারা সাভারের শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে বিদ্যমান দল বা সমষ্টিকে অর্থাৎ মালিক-শ্রমিক পক্ষকে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন। এভাবে তারা আলোচ্য সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান দিতে সমর্থ হবেন। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে শিল্প সমাজকর্ম উপরোলিস্নখিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ৪. দরিদ্র বাবার সন্তান শারমিনের অল্প বয়সে বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরে তার একটি প্রতিবন্ধী সন্তান হয়। শারমিনের স্বামী তার ভরণপোষণ করতে না পেরে তাকে তালাক দেয়। দরিদ্র, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা শারমিন প্রতিবন্ধী সন্তানটিকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছে। ক. চিকিৎসা সমাজকর্মের সর্বপ্রথম প্রয়োগ শুরু হয় কত সালে? খ. শিল্প সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ? গ. উদ্দীপকের শারমিন ও তার সন্তানের জন্য সমাজকর্মের কোন শাখা সাহায্য করতে পারে? আলোচনা করো। ঘ. উদ্দীপকের উলিস্নখিত শাখা বাংলাদেশের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে কতটা কার্যকরী বলে তুমি মনে কর? ব্যাখ্যা করো। উত্তর : ক. ১৯০৫ সালে চিকিৎসা সমাজকর্মের সর্বপ্রথম প্রয়োগ শুরু হয়। খ. শিল্প সমাজকর্ম বলতে কারখানার পরিবেশে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করার লক্ষ্যে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতার অনুশীলনকে বোঝায়। শিল্প সমাজকর্ম পেশাদার সমাজকর্ম অনুশীলনের একটি বিশেষায়িত শাখা। এক্ষেত্রে শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতা প্রয়োগ করা হয়। মূলত শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সামাজিক ভূমিকা ও মানবিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করাই শিল্প সমাজকর্মের লক্ষ্য। গ. উদ্দীপকের শারমিন ও তার সন্তানের সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের অন্যতম শাখা ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম সাহায্য করতে পারে। ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মেও সেই শাখা যেখানে সাহায্যাথীর (ঈষরবহঃ) সমস্যা (রোগ) নির্ণয় বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমাধানে সাহায্য করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সমাজকর্মের এ শাখার বৈশিষ্ট্য। বিবাহবিচ্ছেদ, অটিজম প্রভৃতির মতো সমস্যা নিয়ে এ শাখা কাজ করে। উদ্দীপকের শারমিন একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। তার সন্তানটিও প্রতিবন্ধী। সে দারিদ্র্য ও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা তাকে সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করতে পারেন। ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা দৈহিক ও মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অবহেলা, বঞ্চনা এবং সহিংসতার শিকার মানুষদের নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বামী পরিত্যক্তা শারমিনের মানসিক শক্তি ফিরিয়ে আনতে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্মীরা সাহায্য করতে পারেন। সমাজকর্মীরা তার প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতেও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন। এভাবে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম শারমিন ও তার প্রতিবন্ধী সন্তানকে নতুন করে আশার আলো দেখাতে পারে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে