বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর
  ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ
দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ

পঞ্চম অধ্যায়

উত্তর :

ক. বায়ুমন্ডলকে ভূপৃষ্ঠে থেকে উপরের দিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি স্তরে ট্রপোমন্ডল, স্ট্রাটোমন্ডল, মেসোমন্ডল, তাপমন্ডল ও এক্সোমন্ডলে ভাগ করা হয়।

খ. জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু বায়ুমন্ডলের টধপোমন্ডলের উপরের দিকে অতিরিক্ত শীতলতার সংস্পর্শে এলে ঘনীভূত হয় এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণা ও তুষারকণা ধূলিকণা বা বাতাসে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ কণাকে আশধয় করে ক্রমশ বড় হলে

আকাশে ভেসে বেড়াতে পারে না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে নিচে নেমে আসে। এভাবে বারিপাত ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে।

গ. শিহাব বায়ুমন্ডলের যে বিশেষস্তরের কথা বলেছিল সেটি হলো ট্রপোমন্ডল। কারণ ট্রপোমন্ডল জীবজগতের জন্য অপরিহার্য। ট্রপোমন্ডল বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর। ট্রপোমন্ডল ভূপৃষ্ঠের সাথে লেগে আছে।

আমরা ট্রপোমন্ডলে বাস করি। প্রাণিজগতের জন্ম, বৃদ্ধি, বিকাশ, মৃতু্য, বিয়োজন সবকিছুই এ স্তরে সংঘটিত হয়। বায়ুমন্ডলের এ স্তরেই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও তাপমাত্রা আছে যা উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বসবাসের উপযোগী। মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশা সবকিছুই এই স্তরে সৃষ্টি হয়। এই স্তর

ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৬-১৮ কিলোমিটার এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রাণিজগতের গঠন উপযোগী সকল উপাদান প্রাণিজগৎ এ স্তর থেকেই গ্রহণ করে থাকে। এ স্তরেই

বিভিন্ন জৈব ভূরাসায়নিক চক্র যেমন পানি, কার্বন ও অক্সিজেন চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে এবং জীবনধারণের জন্য ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।

সুতরাং বায়ুমন্ডলের ট্রপোমন্ডল স্তরটি জীবজগতের জন্য অপরিহার্য।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত মন্ডলটি হলো বায়ুমন্ডল। বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, উষ্ণতার নিরিখে বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস করা হয়। কিন্তু এই স্তরবিন্যাস অত্যন্ত তাৎপর্যময়। কেননা বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তর নানাভাবে জীবজগৎকে

পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রেখেছে। বস্তুত বায়ুমন্ডল আছে বলেই পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল টিকে আছে। বায়ুমন্ডলের স্তরভেদে তাৎপর্য বিশ্লেষণ

করলে দেখা যায় -

১. ট্রপোমন্ডল ছাড়া কোনো আবহাওয়ারও সৃষ্টি হতো না; বরফ জমতো না; মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, শিশির, তুষার, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদির সৃষ্টি হতো না। শস্য ও বনভূমির জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হতো না।

২. বায়ুমন্ডল ছাড়া যেমন কোনো শব্দ তরঙ্গ স্থানান্তরিত হয় না, তেমনি ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নস্তরে বাধা পেয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

৩. পৃথিবীতে বায়ুমন্ডলীয় স্তর তথা মেসোমন্ডল থাকায় এর দিকে আগত উল্কাপিন্ড অধিক পরিমাণে বিধ্বস্ত হয়। ওজোনস্তর না থাকলে সূর্য থেকে মারাত্মক অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে প্রাণিকুল বিনষ্ট করত। সুতরাং পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে বায়ুমন্ডলীয় স্তরগুলো অপরিহার্য।

৩. মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের জলবায়ুর উপর অধিক হওয়ায় বাংলাদেশের জলবায়ুকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়। এ জলবায়ুর কারণে এদেশের ঋতু পরিবর্তন ঘটে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত হয়।

শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না।

ক. 'লু' কী?

খ. ভূমধ্যসাগরীয় বায়ুকে ঋতু আশ্রয়ী বায়ু বলা হয় কেন?

গ. উদ্দীপকের দেশটিতে নির্দেশিত বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের কারণ উলেস্নখ কর।

ঘ. দেশটিতে উক্ত বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:

ক. 'লু' ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ।

খ. ভূমধ্যসাগরীয় বায়ু ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে দিক পরিবর্তন করে। এজন্য ভূমধ্যসাগরীয় বায়ুকে ঋতু আশ্রয়ী বায়ু বলা হয়। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের ফলে শীত-গ্রীষ্ম ঋতুভেদে স্থলভাগ ও জলভাগের তাপের তারতম্য ঘটে। সেজন্য ঋতু আশ্রয়ী বায়ুর সৃষ্টি হয়। ভূমধ্যসাগরীয় বায়ু

তার অন্যতম উদাহরণ।

গ. উদ্দীপকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ু নির্দেশিত হয়েছে যা ঋতুভেদে উষ্ণতার পার্থক্যের কারণে দিক পরিবর্তন করে। বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের অন্তর্গত একটি দেশ।

উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়।

এর ফলে কর্কটক্রান্তি অঞ্চলের অন্তর্গত বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিশয় উত্তপ্ত হয়। ফলে বায়ুর চাপ কমে যায় এবং একটি সুবৃহৎ নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিততে দক্ষিণ গোলার্ধের ক্রান্তীয় উচ্চচাপ

বলয় থেকে আগত দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবলবেগে ছুটে যায়। নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ুর গতি বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এ জন্য গ্রীষ্মের এ

বায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে। শীতকালে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তির নিকট অবস্থান করায় সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় স্থলভাগ অত্যন্ত শীতল হওয়ায় সেখানে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে স্থলভাগের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু দক্ষিণের নিম্নচাপের দিকে

প্রবাহিত হয়। এ বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে। এভাবে শীত ও গ্রীষ্মে বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু দিক পরিবর্তন করে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে