ষষ্ঠ অধ্যায়
৩. রফিক সাহেব একজন নাবিক। ফলে তার বেশির ভাগ সময় সমুদ্রে কাটে। সমুদ্রস্রোতের অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। কারণ তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করেন।
ক. পৃথিবীর গভীরতম খাত কোনটি?
খ. হিমশৈল কীভাবে সৃষ্টি হয়?
গ. রফিক সাহেবের বিচিত্র অভিজ্ঞতা সৃষ্টির পিছনে কার্যরত ঘটনার কারণ হিসেবে পৃথিবীর আহ্নিক গতি, মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের বরফের গলন ও ভূখন্ডের অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত প্রপঞ্চ কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে- বিশ্লেষণ কর।
উত্তর :
ক. পৃথিবীর গভীরতম খাত ম্যারিয়ানা খাত।
খ. সমুদ্রে ভাসমান অতিকায় বরফ বস্তুকে 'হিমশৈল' বলে। প্রকৃতপক্ষে হিমশৈল হলো হিমবাহেরই খন্ডিত অংশ। পাহাড়-পর্বত ও উপত্যকার ওপর দিয়ে হিমবাহ চলতে চলতে যখন সমুদ্রে পতিত হয় তখন সেই বিরাট হিমবাহ সমুদ্রের ঢেউ ও স্রোতের ধাক্কায় ভেঙে গিয়ে বড় বড় খন্ডে
বিভক্ত হয়। বৃহৎ এই বরফ খন্ড গুলোই হিমশৈল নামে পরিচিত। এগুলো সমুদ্রের অনেক দূর পর্যন্ত ভেসে চলে এবং বরফ পাহাড়ের মতোই দেখা যায়।
গ. রফিক সাহেবের বিচিত্র অভিজ্ঞতা সৃষ্টির পিছনে কার্যরত রয়েছে সমুদ্রস্রোত। উদ্দীপকে এরূপই উলেস্নখ রয়েছে। সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে পৃথিবীর আহ্নিক গতি, মেরু অঞ্চলের সমুদ্রের বরফের গলন এবং ভূখন্ডের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হলো।
পৃথিবীর আহ্নিক গতি : পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে ফেরেলের সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রের পানিও উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে বরফের গলন : মেরু অঞ্চলের সমুদ্রে বরফ কিছু পরিমাণ গলে গেলে পানিরাশি স্ফীত হয় ও সমুদ্র পানির লবণাক্ততার পরিমাণ হ্রাস পায়। এর ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
ভূখন্ডের অবস্থান : সমুদ্রস্রোতের প্রবাহপথে কোনো মহাদেশ, দ্বীপ প্রভৃতি ভূখন্ড অবস্থান করলে সমুদ্রস্রোত তাতে বাধা পেয়ে দিক ও গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় এর প্রভাবে সমুদ্রস্রোত একাধিক শাখায় বিভক্ত হয়।
ঘ. উক্ত প্রপঞ্চ তথা সমুদ্রস্রোত ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। যথা :
১. নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমন্ডলের পানি রাশিতে শীতকালে বরফ জমে যায়। এ অঞ্চলগুলোতে উষ্ণ সেধাত প্রবাহিত হলে সমুদ্রের পানি বরফ হতে পারে না। যেমন : উপসাগরীয় উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে নরওয়ের উত্তর উপকূলীয় অঞ্চলে শীতকালেও বরফ জমে না। এ
কারণে বন্দরগুলোর পথ বন্ধ থাকে না এবং সারাবছর ব্যবসা- বাণিজ্য চলে।
২. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন স্থলে শীতল স্রোত উষ্ণ হওয়ায় এর সাথে প্রবাহিত হিমশৈল গলে বালি, কাঁকর ও নুড়ি প্রভৃতি সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে। এরূপ মগ্নচড়ায় প্রচুর মৎস্যের সমাগম হয় এবং সেখানে মৎস্য শিকার ও মৎস্য ব্যবসা গড়ে ওঠে। ফলে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
৩. সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলের ওপর সমুদ্রস্রোতের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। স্রোতের অনুকূলে জাহাজ চালিয়ে দ্রম্নত গন্তব স্থলে যাওয়া যায়। এতে মালপত্র রপ্তানি ও আমদানি করা সহজ হয়।
৪. শীতল স্রোতের সাথে প্রচুর মাছ আসে এবং উষ্ণ স্রোতের সাথে শীতল স্রোত যেখানে মিলিত হয় সেখানে মাছগুলো থেকে যায়।
আবার এরূপ স্থানে মৎস্য খাদ্য প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলে বাণিজ্য প্রসার লাভ করে।
সপ্তম অধ্যায়
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার পরিবর্তনের ধারাকে সাধারণভাবে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। ১. প্রাথমিক পর্যায়, ২. মাধ্যমিক পর্যায়, ৩. সাম্প্রতিক পর্যায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার, শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি কারণে উন্নত বিশ্বে নবজাতক ও শিশুমৃতু্যর হার হ্রাস এবং মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেলেও উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে মৃতু্যহার কমেনি, তবে অভিগমনের ফলে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিশ্বের জনসংখ্যার বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিবর্তনের ধারা : সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা পরিবর্তনের তারতম্য হচ্ছে জনসংখ্যা পরিবর্তনের গতিধারা। ১৬৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন, ১৮৫০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১.২ বিলিয়ন। ১৯৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২.৫৩ বিলিয়ন।
যা ২০১৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৭.২৩ বিলিয়নে। সুদূর অতীতকাল থেকে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে প্রাথমিক পর্যায় বলে। ১৬৫০ থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে মাধ্যমিক পর্যায় ধরা হয়। ১৯৫০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাম্প্রতিক পর্যায়ভুক্ত।
জনসংখ্যা পরিবর্তনের নিয়ামক : জনসংখ্যা একটি সক্রিয় পরিবর্তনশীল উপাদান। জনসংখ্যার এই পরিবর্তন ঘটছে জন্ম, মৃতু্য ও অভিবাসনের কারণে। এগুলোকে আমরা জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রক্রিয়ার নিয়ামক বলতে পারি। এই নিয়ামকগুলোর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে কোনো সমাজ তথা দেশের জনমিতিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়ে থাকে।
জন্মহার : স্বাভাবিক জন্মহার নারীদের সন্তান ধারণের সামর্থ্য নির্দেশ করে। তবে কোনো নির্দিষ্ট এক বছরের প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে সাধারণ জন্মহার বলে।
অভিবাসন : স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে অন্য শহরে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে অভিগমন করে। ফলে কোথাও জনসংখ্যা কমে আবার কোথাও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই অভিবাসন প্রক্রিয়াও জনসংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়